mobile phoneআজকের দিনে ফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আপনার কাজ, বিনোদন, ক্যামেরা, গেমিং, অনলাইন ক্লাস, সোশ্যাল মিডিয়া — সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। তাই নতুন ফোন কেনার সময় শুধু দাম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
বাজারে রয়েছে অগণিত ব্র্যান্ড ও মডেল। কারো দরকার গেমিং ফোন, কারো প্রয়োজন ভালো ক্যামেরা, আবার কেউ খোঁজেন ব্যাটারি ব্যাকআপ। আপনার প্রয়োজনটাই বলে দেবে, কোন ফোনটি আপনার জন্য সঠিক।
এই আর্টিকেলে আমরা জানব নতুন স্মার্টফোন কেনার আগে আপনাকে ঠিক কোন ৭টি বিষয় অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে, যাতে আপনি আপনার টাকা অনুযায়ী সেরা মানের ফোনটি বেছে নিতে পারেন।
১. আপনার প্রয়োজনটা আগে বুঝুন (Know Your Purpose First)
নতুন ফোন কেনার আগে এক নম্বর প্রশ্ন হওয়া উচিত: “আমি এই ফোনটি কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করব?”
- আপনি কি প্রচুর ফটোগ্রাফি করেন?
- গেম খেলেন অনেক?
- বেশি ভিডিও দেখেন বা কনটেন্ট তৈরি করেন?
- নাকি শুধু সাধারণ ব্যবহার — কল, মেসেজ, হালকা ইন্টারনেট?
উদাহরণ:
- ক্যামেরা প্রেমীদের জন্য দরকার ভালো সেন্সর, OIS, নাইট মোড, ও ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং।
- গেমারদের জন্য দরকার হাই রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লে, গেমিং চিপসেট ও কুলিং সিস্টেম।
- অনলাইন ক্লাস / অফিসের জন্য দরকার স্টেবল নেটওয়ার্ক, ভালো ব্যাটারি ও নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স।
আগে নিজের প্রয়োজন বুঝে নিলে বাজেট ও ফিচার বাছাই অনেক সহজ হয়।

২. প্রসেসর ও পারফরম্যান্স যাচাই করুন (Processor & Performance)
আপনার ফোনের প্রসেসর হচ্ছে তার মস্তিষ্ক। একটি শক্তিশালী প্রসেসর মানে ফোন চলবে ফাস্ট, ল্যাগ ছাড়াই।
যদি আপনি গেম খেলেন:
- খুঁজুন: Snapdragon 7 Gen 1 / 8 Gen 2, Dimensity 8000 সিরিজ বা Apple A সিরিজ
- দেখুন: GPU, thermal control, game mode
যদি আপনি কাজের জন্য ফোন ব্যবহার করেন:
- খুঁজুন: 6GB বা তার বেশি RAM, UFS 3.1 স্টোরেজ, অপ্টিমাইজড OS
কিছু জনপ্রিয় চিপসেট:
Brand | Entry Level | Mid Range | Flagship |
---|---|---|---|
Snapdragon | 680/695 | 778G / 7s Gen 2 | 8 Gen 2 |
MediaTek | Helio G88 | Dimensity 7050 | Dimensity 9200 |
Apple | — | — | A15 Bionic, A17 Pro |
টিপ: AnTuTu বা GeekBench স্কোর দেখে একটুও অতিমাত্রায় বিচার না করে বাস্তব অভিজ্ঞতা বা রিভিউ দেখুন।
৩. ব্যাটারি ও চার্জিং স্পিড (Battery Life & Fast Charging)
একটা দারুণ ফোন হলেও যদি সারাদিনে ২ বার চার্জ দিতে হয় — তাহলে কষ্টের সীমা নেই! তাই ব্যাটারির উপর কখনোই কমপ্রোমাইজ করবেন না।
কী দেখবেন:
- কমপক্ষে 5000 mAh ব্যাটারি
- Fast Charging Support (কমপক্ষে 33W বা তার বেশি)
- Type-C port
- Battery optimization features (Adaptive Battery, Power Saving Modes)
Real Example:
- Realme, Redmi, Infinix-এ 67W–120W চার্জিং এখন খুব কমন।
- Samsung-এর M সিরিজে ব্যাটারি অপটিমাইজেশন দারুণ।
টিপ: শুধু চার্জিং ওয়াট নয়, “চার্জিং টাইম” ও ব্যাটারি হেল্থও গুরুত্ব দিন।

৪. ডিসপ্লে ও রেজোলিউশন (Display Quality Matters)
আমরা প্রতিদিন গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা ফোনের স্ক্রিন দেখি। তাই ডিসপ্লের মান খারাপ হলে চোখে চাপ পড়ে, অভিজ্ঞতা খারাপ হয়।
কী দেখে কিনবেন:
- AMOLED/ Super AMOLED > LCD: কালার ও কনট্রাস্ট অনেক ভালো
- রিফ্রেশ রেট: কমপক্ষে 90Hz বা 120Hz (মসৃণ স্ক্রলিং)
- Brightness: কমপক্ষে 800 nits হলে রোদেও ভালো দেখা যাবে
- Resolution: Full HD+ হলে সবচেয়ে ভালো
উদাহরণ:
- Samsung ও Vivo ফোনে AMOLED ডিসপ্লে সাধারণত ভালো
- POCO ও iQOO mid-budget এ ভালো রিফ্রেশ রেট দেয়
টিপ: গ্লাস প্রোটেকশন (Gorilla Glass 5+) থাকলে ভালো হয়।

৫. ক্যামেরার বাস্তব পারফরম্যান্স যাচাই করুন (Real-World Camera Output)
MegaPixel সব কিছু নয়! ১০৮MP থাকলেই সেরা ছবি পাওয়া যাবে না — বরং সফটওয়্যার প্রসেসিং, সেন্সর কোয়ালিটি এবং OIS এসবই বেশি জরুরি।
দেখে কিনুন:
- Primary Sensor Quality (Sony IMX / Samsung ISOCELL)
- Night Mode
- OIS (Optical Image Stabilization)
- Ultrawide, Macro, Telephoto লেন্স
- 4K ভিডিও রেকর্ডিং, EIS
সেলফির জন্য:
- 16MP–32MP is okay, but look for AI Beautification + Natural Tone
টিপ: ইউটিউবে “Camera Comparison” ভিডিও দেখুন, যাতে বাস্তব ছবি কেমন আসে বুঝতে পারেন।

৬. Software, UI ও আপডেট পলিসি (Software Experience & Updates)
ফোনে থাকা অপারেটিং সিস্টেম ও ইউজার ইন্টারফেস (UI) আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারে অনেক প্রভাব ফেলে। একটা পরিষ্কার, বিজ্ঞাপনহীন UI আপনার অভিজ্ঞতা অনেক উন্নত করে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- Stock Android বা Clean UI (Pixel UI, OneUI Core) ভালো
- MIUI, ColorOS, Funtouch OS— একটু কাস্টোমাইজড, তবে অনেকেই পছন্দ করেন
- Future Updates: কত বছর OS ও Security Update পাবে?
উদাহরণ:
- Samsung ও Google ৪–৫ বছর পর্যন্ত আপডেট দেয়
- OnePlus ও Nothing Phone সফটওয়্যার অভিজ্ঞতায় অনেক ভালো
টিপ: ফোনের বিজ্ঞাপন বা bloatware বন্ধ করার সুবিধা আছে কিনা দেখে নিন।
৭. ব্র্যান্ড রিলায়েবিলিটি, ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সেন্টার
একটা ভালো ফোন মানে শুধু ফিচার না, বরং পরবর্তী সাপোর্ট ও সার্ভিস। ফোনে কোনো সমস্যা হলে আপনি কীভাবে সাহায্য পাবেন সেটাও বড় বিষয়।
খেয়াল রাখুন:
- ওয়ারেন্টি: কমপক্ষে ১ বছর যেন থাকে
- সার্ভিস সেন্টার: আপনার শহরে আছে কিনা
- Customer Review: ফোনের পারফরম্যান্স, গরম হওয়া, চার্জিং সমস্যা ইত্যাদি
ব্র্যান্ড পরিচিতি:
ব্র্যান্ড | ভালো দিক | সতর্কতা |
---|---|---|
Samsung | নির্ভরযোগ্যতা, আপডেট | দামে কিছুটা বেশি |
Xiaomi | ফিচার রিচ, বাজেট ফ্রেন্ডলি | বেশি Bloatware |
Realme | দ্রুত চার্জিং ও ডিজাইন | UI মাঝে মাঝে ল্যাগ করে |
iPhone | প্রিমিয়াম, লং টার্ম | দাম ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল |
টিপ: Grey Market বা ফেক ফোন থেকে দূরে থাকুন। Always buy from authorized seller/shop.
শেষ কথা: নিজের প্রয়োজন বুঝে কিনুন, অন্যের দেখাদেখি নয়
ফোন কেনার আগে গ্লসি বিজ্ঞাপন বা ট্রেন্ড দেখে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি সহজেই ঠকে যেতে পারেন। কারণ অন্যের পছন্দ আপনার প্রয়োজনের সঙ্গে না-ও মিলতে পারে।
এই ৭টি দিক (প্রয়োজন, প্রসেসর, ব্যাটারি, ডিসপ্লে, ক্যামেরা, সফটওয়্যার, ব্র্যান্ড রিলায়েবিলিটি) খেয়াল রেখে যদি আপনি ফোন বেছে নেন, তাহলে আপনার টাকা পুরোপুরি সঠিক জায়গায় খরচ হবে।
সংক্ষেপে: ফোন কেনার চেকলিস্ট
বিষয় | খেয়াল রাখবেন |
---|---|
প্রয়োজন | আপনি কেন ফোন নিচ্ছেন? গেম, ক্লাস, ক্যামেরা, নাকি ব্যাটারি? |
প্রসেসর | মিড রেঞ্জে Snapdragon 7/Dimensity 8000 ভালো |
ব্যাটারি | 5000 mAh + Fast Charging (কমপক্ষে 33W) |
ডিসপ্লে | AMOLED + 90Hz/120Hz রিফ্রেশ রেট |
ক্যামেরা | MP নয়, বাস্তব পারফরম্যান্স দেখুন (Night Mode, OIS) |
সফটওয়্যার | ক্লিন UI ও আপডেট সুবিধা |
সার্ভিস | ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সেন্টার কভারেজ আছে কি না |
FAQ: ফোন কেনার আগে আরও কিছু সাধারণ প্রশ্ন
১. অনলাইন থেকে ফোন কিনলে কি নিরাপদ?(mobile phone)
হ্যাঁ, যদি আপনি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা নির্ভরযোগ্য ই-কমার্স (Daraz, Flipkart, Amazon) থেকে কেনেন।
২. কত RAM/Storage থাকলে ভালো?(mobile phone)
কমপক্ষে 6GB RAM + 128GB Storage হলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো।
৩. 5G দরকার কি?(mobile phone)
আপনি যদি ২–৩ বছর ফোন বদলাতে না চান, তাহলে 5G future-proof (mobile phone)অপশন হিসেবে ভালো।