আমাদের এই ওয়েবসাইটে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর ছাড়াও নতুন পাঠ্যসূচী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নির্দেশিত প্রশ্নপত্রের নতুন কাঠামো অনুযায়ী প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হল। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর এর পাশাপাশি আমাদের এই ওয়েবসাইটে পাঠ্য বইতে উল্লেখিত এবং পর্ষদ নির্দেশিত অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়। এমনকি , এবারের নতুন holistic progress card approach অনুসারে model question paper এর উত্তরগুলি দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সঠিক ও নির্ভুলভাবে। এ ছাড়া ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর এর পাশাপাশি পঠনসেতু, model activity top (MAT), OPEN ENDED QUESTION (ORQ) এর অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী গুলির উত্তর আলোচনা করা হলো। প্রিয় শিক্ষার্থীগণ কে বলা হচ্ছে আমাদের এখানে নিখুঁতভাবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন এর সকল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়ে থাকে যা তোমাদের উপকারে আসতে পারে এবং তোমাদের পরীক্ষায় যাতে ভালো সফলতা আসে তার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে চলেছি। আশা করি এই ওয়েবসাইট থেকে তোমাদের উপকার করতে পারব।
সর্বোপরি যাদের জন্য এই ওয়েবসাইটে নিখুঁতভাবে প্রশ্ন উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় তাদের সকলকেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি এবং তোমাদের উপকার হলে আমরা আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
গুরুত্বপূর্ণ (MCQ) প্রশ্ন ও উত্তর। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর | Class 8 History Chapter 5 Bengali (WBBSE)
প্রতিটি প্রশ্নের মান 1
1. ব্রিটিশ আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত উচ্চবর্ণের মধ্যবিত্তদের বলা হত –
ক) বিদ্রোহী
খ) ভদ্রলোক
গ) ব্রাহ্মণ
ঘ) বুর্জোয়া
উত্তর: খ) ভদ্রলোক
2. সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং বীরেশ লিঙ্গম পানতুলুর কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিশেষ মিল পাওয়া যায় –
ক) দুজনেই সংস্কৃত ভট্টাচার্য প্রসিদ্ধি ঘটিয়েছিলেন
খ) দুজনেই মুদ্রণ ব্যবস্থার বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন
গ) দুজনেই বিধবা বিবাহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
ঘ) দুজনেই সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন
উত্তর: গ) দুজনেই বিধবা বিবাহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
3. সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয় –
ক) ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: গ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে
4. বেঙ্গল গেজেট পত্রিকাটি প্রকাশ করেন –
ক) জেমস অগাস্টাস হিকি
খ) উইলিয়াম হান্টার
গ) উইলিয়াম কেরি
ঘ) জন মার্স ম্যান
উত্তর: ক) জেমস অগাস্টাস হিকি
5. দিগদর্শন কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় –
ক) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: গ) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে
6. সমাচার দর্পণ কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় –
ক) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: ঘ) ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে
7. কত খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন জারি করা হয় –
ক) ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: গ) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে
8. হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও কে ছিলেন –
ক) হিন্দু কলেজের শিক্ষক
খ) সংস্কৃত কলেজের শিক্ষক
গ) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষক
ঘ) কলকাতা মাদ্রাসার শিক্ষক
উত্তর: ক) হিন্দু কলেজের শিক্ষক
9. প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন –
ক) দয়ানন্দ সরস্বতী
খ) আত্মারাম পান্ডু রঙ্গ
গ) মহাদেব গোবিন্দ রানাডে
ঘ) বিষ্ণু শাস্ত্রী পন্ডিত
উত্তর: খ) আত্মারাম পান্ডু রঙ্গ
10. বীরেশ লিঙ্গম পানতুলু প্রভাবিত হয়েছিলেন –
ক) ব্রাহ্মসমাজ এর দ্বারা
খ) আর্য সমাজের দ্বারা
গ) প্রার্থনা সমাজের দ্বারা
ঘ) সত্যশোধক সমাজের দ্বারা
উত্তর: ক) ব্রাহ্মসমাজ এর দ্বারা
11. আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন –
ক) রামমোহন রায়
খ) দয়ানন্দ সরস্বতী
গ) রাজনারায়ণ বসু
ঘ) বিষ্ণু শাস্ত্রী পন্ডিত
উত্তর: গ) রাজনারায়ণ বসু
12. জ্যোতিরাও ফুলে নিচু তলার মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্থাপন করেন –
ক) ব্রাহ্মসমাজ
খ) আর্য সমাজ
গ) সত্যশোধক সমাজ
ঘ) প্রার্থনা সমাজ
উত্তর: গ) সত্যশোধক সমাজ
13. জাতীয় মেলার পরবর্তীকালে নাম হয় –
ক) আত্মীয় সভা
খ) হিন্দু মেলা
গ) পৌষ মেলা
ঘ) ব্রাহ্ম সভা
উত্তর: খ) হিন্দু মেলা
14. হুল শব্দের অর্থ –
ক) মহাজন
খ) জমিদার
গ) বিদ্রোহ
ঘ) বহিরাগত
উত্তর: গ) বিদ্রোহ
15. মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা ছিলেন –
ক) বিরসা মুন্ডা
খ) সিধু
গ) তিতুমীর
ঘ) ভৈরব
উত্তর: ক) বিরসা মুন্ডা
16. প্রদত্ত কোন কারণটি উপজাতি বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় –
ক) উপনিবেশিক অরণ্য আইন
খ) জমিদার মহাজনদের শোষণ
গ) উপজাতি সম্প্রদায়ের আধুনিকীকরণ
ঘ) উপজাতি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ
উত্তর: গ) উপজাতি সম্প্রদায়ের আধুনিকীকরণ
17. নীল বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন –
ক) বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস
খ) সিধু
গ) ভৈরব
ঘ) বিরসা মুন্ডা
উত্তর: ক) বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস
18. নীলদর্পণ নাটকটি প্রকাশিত হয় –
ক) ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: গ) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে
19. সিপাহী বিদ্রোহ হয় –
ক) ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: ঘ) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে
20. সিপাহীরা কাকে হিন্দুস্তানের সম্রাট বলে ঘোষণা করেছিলেন –
ক) লর্ড ক্যানিং কে
খ) ভিক্টোরিয়াকে
গ) সাহ আলমকে
ঘ) বাহাদুর শাহ জাফর কে
উত্তর: ঘ) বাহাদুর শাহ জাফর কে
21. ১৮৫৭-র বিদ্রোহে গ্রামে খবর দেওয়া নেওয়ার মাধ্যম ছিল –
ক) রুটি
খ) চিঠি
গ) টেলিগ্রাফ
ঘ) সংবাদপত্র
উত্তর: ক) রুটি
22. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কার্ল মার্কস বলেছেন –
ক) জাতীয় বিদ্রোহ
খ) ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধ
গ) সিপাহী বিদ্রোহ
ঘ) সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া
উত্তর: খ) ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধ
23. মহাবিদ্রোহের সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন –
ক) লর্ড ক্যানিং
খ) লর্ড ওয়েলেসলি
গ) লর্ড ডালহৌসি
ঘ) লর্ড জেমসফোর্ড
উত্তর: ক) লর্ড ক্যানিং
24. ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন লোপ পেয়েছিল –
ক) ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: খ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
পড়াশোনার আরও আপডেট ও MCQ প্রশ্ন উত্তর পেতে প্রতিদিন ভিজিট করুন BongNewsLive.com
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ প্রশ্ন ও উত্তর | Class 8 History Chapter 5 Bengali (WBBSE)
প্রতিটি প্রশ্নের মান 1
- কি আইন করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন?
উত্তর: লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং
2. কত খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি বেঙ্গল গেজেট প্রকাশ করেন?
উত্তর: ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে
3. ডিরোজিওর ছাত্রদের কি বলা হত?
উত্তর: নব্য বঙ্গ
4. পশ্চিম ভারতে নারী শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগী একজন মহিলার নাম লেখ।
উত্তর: পন্ডিতা রামাবাঈ
5. কে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: রাজা রামমোহন রায়
6. লোকহিতবাদী নামে কে পরিচিত ছিলেন?
উত্তর: গোপাল হরি দেশমুখ
7. আর্য সমাজ এর প্রতিষ্ঠা কে করেন?
উত্তর: দয়া নন্দ সরস্বতী
8 . “Go back to the Vedas” এই কথাটি কে বলেছিলেন?
উত্তর: দয়া নন্দ সরস্বতী
9. মুসলমান সংস্কারকদের মধ্যে কে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ছিলেন?
উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমদ খান
10. কে আলীগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমদ খান
11. কাকে মুসলমান সমাজের রামমোহন বলা হয়?
উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমদ খানকে
12. কত খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল?
উত্তর: ১৮৫৫–৫৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে
13. সাঁওতালরা তাদের এলাকায় বহিরাগত মহাজন ও জমিদারদের কি নামে অভিহিত করত?
উত্তর: দিকু
14. তিতুমীরের আসল নাম কি?
উত্তর: মির নিশার আলী
15. বারাসাত বিদ্রোহের সময়ে কে বাদশাহ উপাধি নিয়েছিলেন?
উত্তর: তিতুমীর
16. ফরাজি কথার অর্থ কী?
উত্তর: ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য
17. বাংলায় কত খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ শুরু হয়?
উত্তর: ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে
18. নীলদর্পণ নাটকটি কে রচনা করেন?
উত্তর: দীনবন্ধু মিত্র
19. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ প্রকৃত অর্থে কোথায় শুরু হয়েছিল?
উত্তর: মিরাটে
20. বেঙ্গল আর্মির বেশিরভাগ সিপাহী কোন অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল?
উত্তর: অযোধ্যার
21. মহাবিদ্রোহের পরে গভর্নর জেনারেল পদের পরিবর্তে কোন পদ তৈরি করা হয়?
উত্তর: ভাইসরয়
22. ভারতের প্রথম ভাইসরয় কে ছিলেন?
উত্তর: লর্ড ক্যানিং

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ প্রশ্ন ও উত্তর | Class 8 History Chapter 5 Bengali (WBBSE)
প্রতিটি প্রশ্নের মান 2/3
1. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ফলাফল সম্পর্কে লেখ
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ফলে ইংরেজি ভাষার প্রসার ঘটে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি গঠিত হয় এবং সমাজে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানচিন্তা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটে। একইসঙ্গে জাতীয়তাবাদী ভাবনার বীজ রোপিত হয়।
2. ঔপনিবেশিক সমাজে কাদের মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক বলা হত
ঔপনিবেশিক সমাজে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত, সরকারি চাকরি প্রাপ্ত, শহরকেন্দ্রিক হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত উচ্চবর্ণের লোকদের মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক বা ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণি বলা হতো। তাঁরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে সমাজ সংস্কারে আগ্রহী ছিলেন।
3. ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে কেন মধ্যবিত্তরা অসন্তুষ্ট হয়
মধ্যবিত্তরা উচ্চশিক্ষা পেলেও প্রশাসনে উচ্চপদ লাভ করতেন না। বর্ণবৈষম্য, বেতন বৈষম্য এবং ব্রিটিশ শাসকদের দম্ভ তাদের হতাশ করে। ফলে, ইংরেজ শাসনের প্রতি ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে অসন্তোষ জন্ম নেয়।
4. উনিশ শতকের বাংলার সমাজ সংস্কার আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য কি ছিল
এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল নারী-শিক্ষা, বিধবা বিবাহ, সতীদাহ প্রথা রদ, বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদ এবং ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণ। বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায় প্রমুখ নেতারা যুক্তি, মানবতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এগিয়ে আসেন।
5. উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র ও সাহিত্যের গুরুত্ব লেখ
সংবাদপত্র ও সাহিত্য সমাজের সমস্যা, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং নতুন চিন্তাধারাকে প্রচার করে। ‘সমাচার দর্পণ’, ‘বেঙ্গল গেজেট’ বা ‘নীলদর্পণ’-এর মতো রচনা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
6. সতীদাহ প্রথা কি
সতীদাহ প্রথা ছিল এক নির্মম প্রথা, যেখানে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে স্বামীর চিতায় জীবন্ত দগ্ধ করা হতো। এটি হিন্দু সমাজে ধর্মীয় প্রথা হিসেবে দেখা হলেও, নারীদের প্রতি চরম সহিংসতা ছিল।
7. সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকার বিবরণ দাও
রাজা রামমোহন রায় যুক্তি ও মানবাধিকার ভিত্তিতে সতীদাহ প্রথার বিরোধিতা করেন। তিনি পত্রপত্রিকায় লেখেন, ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব দেন এবং শেষমেশ ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিঙ্ক এই প্রথা নিষিদ্ধ করেন।
8. উনিশ শতকের বাংলার সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের পরিচয় দাও
এই আন্দোলন ছিল এক সামাজিক জাগরণ। রাজা রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ এই প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আন্দোলনের ফলে ১৮২৯ সালে ব্রিটিশ সরকার সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে।
9. রাজা রামমোহন রায়ের দুটি সংস্কারের কথা উল্লেখ কর
১) সতীদাহ প্রথা বিলোপে নেতৃত্ব।
২) আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলন ও সংবাদপত্র প্রকাশের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
10. নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগর কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করেন, বিধবা বিবাহকে সমর্থন করে সমাজে নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়েন এবং মেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে সামাজিক সংস্কারের পথ দেখান।
11. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা সংস্কারমূলক কার্যাবলী গুলি পয়েন্ট আকারে
- বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার
- মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন
- সংস্কৃত কলেজে সংস্কার
- পাঠ্যপুস্তক রচনা
- শিক্ষার মান ও নৈতিকতার উন্নয়ন
12. বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখ
বিদ্যাসাগর হিন্দু শাস্ত্র থেকে বিধবা বিবাহের সমর্থনে উদ্ধৃতি দেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেন। তার প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন প্রণীত হয়।
13. নব্য বঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল কাদের বলা হয়
হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিওর ছাত্রদের ‘নব্য বঙ্গ’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ বলা হয়। তারা যুক্তিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার বিরোধিতা এবং পাশ্চাত্য ভাবনার প্রতি অনুরাগী ছিল।
14. নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী কোন কোন প্রথার বিরোধিতা করেছিল
তারা সতীদাহ, বহুবিবাহ, নারীদের প্রতি বৈষম্য, জাতপাত ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল এবং সমাজ সংস্কারে যুক্তিনির্ভর মতবাদ প্রচার করে।
15. নারী শিক্ষা আন্দোলনে পন্ডিতা রামাবাই এর অবদান কি ছিল
তিনি বিধবা ও অবহেলিত নারীদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ‘শারদা সদন’ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন করেন এবং নারী অধিকার নিয়ে লিখিত সাহিত্য রচনা করেন।
16. মাদ্রাজে বিরেশলিঙ্গম পানতুলু কিভাবে সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন
তিনি বিধবা বিবাহ, নারী শিক্ষা, কুসংস্কার দূরীকরণে কাজ করেন। প্রথম তেলুগু সংবাদপত্র প্রকাশ করে সমাজে সচেতনতা আনেন এবং ব্রাহ্মণ শ্রেণির বিরোধিতা উপেক্ষা করে নিজে বিধবা বিবাহ করেন।
17. কবে কারা হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন
১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে নবগঠিত ভদ্রলোক সমাজের প্রতিনিধি রাজনারায়ণ বসু ও নবগোপাল মিত্র হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় চেতনা ও স্বদেশী ভাবনার প্রচার।
18. স্বামী বিবেকানন্দ স্মরণীয় কেন
তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি ও আত্মচিন্তার জাগরণ ঘটান। ১৮৯৩ সালের শিকাগো ধর্ম মহাসভায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে সারা বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠাও তার কৃতিত্ব।
19. স্যার সৈয়দ আহমেদের সংস্কারগুলির প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল
তার সংস্কারের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম সমাজে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ব্রিটিশ শাসনের প্রতি সমঝোতা সৃষ্টি। তিনি আলিগড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
20. সাঁওতাল বিদ্রোহের দুটি প্রধান কারণ কি ছিল
১) মহাজন ও জমিদারদের শোষণ
২) বন আইন ও ভূমি কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে জীবিকা হারানো
21. দামিন-ই-কোহ কী
দামিন-ই-কোহ ছিল সাঁওতালদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চল যা ব্রিটিশরা বরাদ্দ করেছিল। পরে এই অঞ্চল দখল ও শোষণের শিকার হয়, যার ফলে সাঁওতাল বিদ্রোহ ঘটে।
22. ডহর কথার অর্থ কি? সিধু কানহু ডহর কোথায় আছে
‘ডহর’ মানে কবরস্থান। সিধু-কানহু ডহর ঝাড়খণ্ডের ভাগনাডিহি অঞ্চলে অবস্থিত। এখানেই সাঁওতাল বিদ্রোহে নিহত সিধু ও কানহুর স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
23. ওয়াহাবি কথাটির অর্থ কি? ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা কিভাবে হয়
ওয়াহাবি মানে বিশুদ্ধ ইসলামে ফিরে যাওয়া। সায়্যেদ আহমদ বেরেলভি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য এই আন্দোলন শুরু করেন, যার প্রভাব বাংলাতেও পড়ে।
24. ওয়াহাবি আন্দোলনের লক্ষ্য কি ছিল দুটি
১) ইসলামের বিশুদ্ধ রূপ ফিরিয়ে আনা
২) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সংগঠিত করা
25. তিতুমীর কেন বিখ্যাত
তিতুমীর মুসলিম কৃষকদের ব্রিটিশ ও জমিদার শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেন। বাশের কেল্লা গড়ে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেন। তিনি ছিলেন এক কৃষক বিদ্রোহের প্রতীক।
26. তিতুমীর কিভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেন
তিনি ফরাজি আন্দোলনের মাধ্যমে ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আনেন। কৃষকদের সংগঠিত করে জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং ‘বাদশাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন।
27. ফরাজি কথাটির অর্থ কি? ফরাজি আন্দোলন বলতে কী বোঝো
‘ফরাজি’ মানে ইসলাম ধর্মের বাধ্যতামূলক কর্তব্য। ফরাজি আন্দোলন ছিল একটি ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারমূলক আন্দোলন, যার লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় শুদ্ধি এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
28. নীল বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো
নীল বিদ্রোহ ছিল কৃষকদের নীল চাষে বাধ্য করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ১৮৫৯ সালে বাংলায় শুরু হওয়া এই বিদ্রোহে কৃষকরা জমিদার ও ব্রিটিশদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়।
29. নীল বিদ্রোহের কারণ কি ছিল
- কৃষকদের জোর করে নীল চাষে বাধ্য করা
- ন্যায্য দাম না দেওয়া
- নির্যাতন, জরিমানা এবং জমি দখল
30. মহাবিদ্রোহ কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল
ভূমিকা: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতের প্রথম বৃহৎ সশস্ত্র বিদ্রোহ।
বিস্তার: ব্যারাকপুর, মিরাট, দিল্লি, কানপুর, লক্ষ্ণৌ, ঝাঁসি, গ্বালিয়র প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
31. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের নেতা-নেত্রীদের নাম লেখ
নানা সাহেব, রানি লক্ষ্মীবাই, তান্তিয়া টোপে, বাহাদুর শাহ জাফর, বেগম হাজরত মহল প্রমুখ ছিলেন বিদ্রোহের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।
32. সিপাহী বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের ব্যর্থতার দুটি কারণ লেখ
১) নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের অভাব
২) আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সংগঠনের ঘাটতি
33. মহারানীর ঘোষণাপত্র কি অথবা তার সুপারিশগুলি লেখ
ভূমিকা: ১৮৫৮ সালে ইংল্যান্ডের মহারানী এক ঘোষণাপত্র জারি করেন।
সুপারিশসমূহ:
- ভারতীয়দের ধর্ম ও প্রথার প্রতি সম্মান
- আইনের দৃষ্টিতে সকল সমান
- সরকারি পদে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি
বিশ্লেষণাত্মক/রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ প্রশ্ন ও উত্তর | Class 8 History Chapter 5 Bengali (WBBSE)
প্রতিটি প্রশ্নের মান 5
1 . ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ফলাফল সম্পর্কে লেখ
ভূমিকা:
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসকগণ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটান, যার প্রভাব সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনে।
প্রভাব ও ফলাফল:
- মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে, যারা সমাজে নেতৃত্ব দিতে শুরু করে।
- জাতীয়তাবাদী চেতনা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।
- ইংরেজি ভাষার প্রচলন বৃদ্ধি পায়।
- বিচার ও প্রশাসনে শিক্ষিত ভারতীয়দের প্রবেশ ঘটে।
- সামাজিক সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়।
মূল্যায়ন:
পাশ্চাত্য শিক্ষা ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে।
2. উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
ভূমিকা:
ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা ছিল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নবজাগরণের কেন্দ্র। এই সময়ে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতির বিরুদ্ধাচরণ।
- নারী অধিকার রক্ষার চেতনা: নারী শিক্ষা, বিধবা বিবাহ ও নারীর সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আন্দোলন।
- ধর্মীয় চিন্তাধারায় পরিবর্তন: ব্রাহ্ম সমাজ, আর্য সমাজের মতো সংগঠন গঠিত হয়।
- পশ্চিমা যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদে প্রভাবিত: সমাজ সংস্কারকরা যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানচেতনা গ্রহণ করেন।
- সংবাদপত্র ও সাহিত্য ব্যবহারে দক্ষতা: মত প্রকাশ ও জনমত গঠনে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের বিকাশ: রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, দয়ারাম সরস্বতী প্রমুখের নেতৃত্বে আন্দোলন সংগঠিত হয়।
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন:
এই আন্দোলন ছিল ভারতের আধুনিক সমাজ গঠনের ভিত্তি। এটি ধর্ম, সমাজ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনে এবং ভবিষ্যতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বীজ বপন করে।
3. সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রাজারাম মোহন রায়ের ভূমিকার বিবরণ দাও
ভূমিকা:
সতীদাহ ছিল একটি নিষ্ঠুর প্রথা, যেখানে স্বামী মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জোরপূর্বক চিতায় সহমরণে বাধ্য করা হতো। রামমোহন রায় এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রথম শক্তিশালী প্রতিবাদ গড়ে তোলেন।
মূল ভূমিকা:
- যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধ ও বক্তৃতা প্রকাশ: সতীদাহর বিরুদ্ধে তাত্ত্বিক ও মানবিক যুক্তি তুলে ধরেন।
- ধর্মীয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিরোধিতা: হিন্দু শাস্ত্রে সতীদাহর কোনও সুনির্দিষ্ট আদেশ নেই—এ দাবি তুলে ধরেন।
- সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি: ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রথা নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
- সাংবাদিকতা ও জনমত গঠন: ‘সংবাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় প্রথাটির অমানবিকতা তুলে ধরেন।
- আইনি সাফল্য অর্জন: ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিঙ্কের অধীনে সতীদাহ আইন করে নিষিদ্ধ হয়।
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন:
রামমোহনের প্রচেষ্টা ভারতের সামাজিক সংস্কারে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা পরবর্তী নারীবাদের ভিত্তি স্থাপন করে।
4. নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগর কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
ভূমিকা:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন নারী শিক্ষার পথিকৃৎ। তাঁর প্রচেষ্টায় নারীরা প্রথমবারের মতো শিক্ষার সুযোগ পেতে শুরু করে।
মূল পদক্ষেপসমূহ:
- নারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: কলকাতায় বহু কন্যাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
- সরকারি সহায়তা গ্রহণ: নারী বিদ্যালয় স্থাপনে সরকারের আর্থিক অনুদান আদায় করেন।
- সামাজিক বাধা অতিক্রম: পুরোহিত ও রক্ষণশীলদের বিরোধিতার মুখেও আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
- সাহিত্য রচনা: সহজ ও শিক্ষামূলক গ্রন্থ রচনা করে নারীদের উপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করেন।
- সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কাজ: নারী শিক্ষাকে সামাজিক উন্নতির হাতিয়ার হিসাবে তুলে ধরেন।
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন:
বিদ্যাসাগরের কর্মধারা নারীর অধিকার ও আত্মমর্যাদার প্রতি সমাজকে সচেতন করে তোলে।
5. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা সংস্কারমূলক কার্যাবলী
- সংস্কৃত কলেজে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণ: নিচু জাত ও সাধারণ ছাত্রদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন।
- সহজ বাংলা ব্যাকরণ রচনা: ‘বর্ণপরিচয়’ ও অন্যান্য গ্রন্থ বাংলা শিক্ষার মান উন্নত করে।
- মধ্যশিক্ষা সংস্কার: বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বিজ্ঞান, গণিত ও ইতিহাসের অন্তর্ভুক্তি ঘটান।
- নারী শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগ: নারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষিকা নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেন।
- বিধবা বিবাহ প্রচলন: সামাজিক সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষার সাথে নৈতিক মূল্যবোধ জুড়ে দেন।
- শিক্ষক ও পাঠ্যক্রমের মান উন্নয়ন: শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়ন কার্যক্রম চালু করেন।
6. নীল বিদ্রোহের কারণ কি ছিল?
ভূমিকা:
১৮৫৯-৬০ সালের নীল বিদ্রোহ ছিল চাষিদের বিরুদ্ধে ইংরেজ নীলকরদের শোষণের প্রতিরোধ।
কারণসমূহ:
- জোর করে নীল চাষ করানো: কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া হতো।
- ন্যায্য মূল্য না পাওয়া: নীলের দাম অত্যন্ত কম দেওয়া হতো, ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
- চাষিদের উপর অত্যাচার: নীলকরদের দালাল ও লাঠিয়াল দ্বারা চাষিদের উপর নির্যাতন চলতো।
- চাষের জমির ক্ষয়: নীল চাষ জমির উর্বরতা নষ্ট করতো, ফলে ধান বা অন্যান্য ফসল চাষ করা যেত না।
- আইন ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব: আদালত ও পুলিশ সবসময় নীলকরদের পক্ষ নিত।
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন:
এই বিদ্রোহ ভারতীয় কৃষক সমাজের প্রথম সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধ, যা ব্রিটিশ শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
7. মহাবিদ্রোহ কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল? (ভূমিকা সহ সংক্ষেপে)
ভূমিকা:
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতের প্রথম সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। এটি সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবেও পরিচিত।
বিস্তার স্থানসমূহ:
- ব্যারাকপুর (পশ্চিমবঙ্গ): মঙ্গল পাণ্ডে প্রথম বিদ্রোহ শুরু করেন।
- মিরাট (উত্তর প্রদেশ): মূল সিপাহি বিদ্রোহ এখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
- দিল্লি: বাহাদুর শাহ জাফরকে সম্রাট ঘোষণা করে দিল্লি বিদ্রোহের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
- লখনৌ: বেগম হাজরতের নেতৃত্বে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
- কানপুর: নানাসাহেবের নেতৃত্বে বিক্ষোভ পরিচালিত হয়।
- ঝাঁসি: রানি লক্ষ্মীবাঈ ছিলেন এই অঞ্চলের প্রধান বিদ্রোহী নেত্রী।
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন:
মহাবিদ্রোহ ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়, যদিও সংগঠন ও সমন্বয়ের অভাবে এটি সফল হয়নি।
8. রাজা রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কারকলক অবদান (সতীদাহ/সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষাপটে)
ভূমিকা:
ঊনবিংশ শতক ছিলেন ভারতীয় সমাজ সংস্কারের সময়। এই সময়ে তথা হিন্দু সমাজে যে কুসংস্কার বিরাজ করছিল তার বিরুদ্ধে রায় ছিলেন প্রথম যুক্তিবাদী ও প্রগতিবাদী নেতা।
মূল অবদান ও কার্যাবলী:
- সতীদাহ প্রথা নিয়ে যুক্তিপূর্ণ কণ্ঠে প্রতিবাদ করে এটি হিন্দু ধর্মে অমানবিক বলে প্রতিষ্ঠা করেন।
- পত্রপত্রিকা ‘সংবাদ কৌমুদী’ ও অখবরের মাধ্যমে জনমত গঠন করেন।
- হিন্দু ধর্মশাস্ত্র, উপনিষদ এবং শাস্ত্রবিদ্যায় ভিত্তি করে ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে সতীদাহ নিষিদ্ধের দাবী জানান।
- ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিঙ্কের নেতৃত্বে আইনীয়ভাবে সতীদাহ নিষিদ্ধ হয়।
- তিনি বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার, ছোঁয়াছুঁয়ি প্রভৃতি সামাজিক কুপ্রথারও বিরোধিতা করেন।
মূল্যায়ন:
রামমোহনের এই সংগ্রাম শুধু একটি সামাজিক প্রথার বিলুপ্তির মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকেনি, এটি ভারতে ধার্মিক যুক্তি ও সামাজিক দূরদর্শীতার ভিত্তিপ্রস্থর হিসেবে কাজ করে।
9. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নারী শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার
ভূমিকা:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০–৯৫) ছিলেন এক প্রগতিবাদী সমাজ সংস্কারক ও নারী শিক্ষার পথিকৃৎ যিনি ১৯ শতকে সমাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনেন।
কার্যাবলী:
- নারী শিক্ষা উন্নয়ন: কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলে কন্যাশিক্ষা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সরকারী সহায়তা আদায় করেন।
- বস্তুগত সংস্কার: বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তনে নেতৃত্ব দেন (১৮৫৬)।
- শিক্ষাগত সংস্করণ: বাংলা ব্যাকরণ ও পাঠ্যপুস্তক রচনা, স্কুলে বিজ্ঞান ও ইতিহাস অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষক প্রশিক্ষণে গুরুত্ব।
- সামাজিক প্রতিবাদ: পুরোহিত, ব্রাহ্মণ ও রক্ষণশীলদের ঐতিহ্য অনুসারে দাঁড়িয়ে সমাজ সংস্কার আন্দোলন করেন।
- জীবন-দৃষ্টান্ত: বিদ্যাসাগর নিজে বিধবা বিবাহ করে আইনের পথে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করেন।
মূল্যায়ন:
বিদ্যাসাগরের কর্মধারা নারীর সামাজিক মর্যাদা ও শিক্ষা প্রসারে যুগান্তকারী প্রভাব ফেলে, যা পরবর্তী নারীবাদের ভিত্তিপ্রস্তরের মতো কাজ করে।
10. সাঁওতাল হুল ও নীল বিদ্রোহের তুলনামূলক আলোচনা (সংশ্লিষ্ট হিন্দু পেট্রিয়টদের ভূমিকা)
ভূমিকা:
১৮৫৫–৬০ সময়ে ভারতের দুটি কৃষক বিদ্রোহ – সাঁওতাল হুল ও নীল বিদ্রোহ – স্থানীয় অধিকার ও শোষণের বিরুদ্ধে বড় প্রতিবাদের চিত্র।
তুলনামূলক কারণ ও প্রেক্ষাপট:
সাঁওতাল হুল | নীল বিদ্রোহ | |
---|---|---|
কারণ | জমি ও বন অধিকার হরণ, স্থানীয় ঐতিহ্য ভেঙে দেওয়া | কৃষককে জোরপূর্বক নীল চাষ বাধ্যতা, আয়ের ন্যায্য কম। |
আন্দোলন পদ্ধতি | ‘ডহর’ প্রথার মাধ্যমে সাঁওতাল সমাজ আয়ত্তে নিয়ন্ত্রণ | গণ-প্রতিরোধ, বিক্ষোভ ও কৃষক একতা। |
হিন্দু পেট্রিয়টদের ভূমিকা | রাজা রামমোহন বা বিদ্যাসাগর সরাসরি নেই, তবে মানবতাবাদী নীতি আদর্শে সহানুভূতিপূর্ণ | বাই-এর অর্থাৎ এলিটদের পক্ষ থেকেও খুব সীমিত সহায়তা, সমাজে কৃষক স্বার্থে জনচেতনা সৃষ্টি। |
মূল্যায়ন:
উভয় বিদ্রোহে আধুনিক শিক্ষিত হিন্দু মনীষীদের সরাসরি অংশ কম ছিল, তবে তাদের মূল্যবোধ (ন্যায়, মানবাধিকার, কৃষকদের অধিকার) সামাজিক মানচিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে।