Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Unique Question and Answer
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর।
Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Question and Answer : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর। West Bengal board of Secondary Education(WBBSE) এর ইতিহাস বিষয়ের ক্লাস class 9th history dwitiya vishwayuddh question answer, suggestion ,notes ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে এখান থেকে বহু বিকল্প ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষায় আসার মত । তাই তোমরা এখান থেকে পড়তে পারো ।
MCQ I দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর |Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Question and Answer:
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]
1) কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে?
a) ১৯১৭
b) ১৯১৮
c) ১৯১৯
d) ১৯২০
✅ উত্তর: b) ১৯১৮
2) কত খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়?
a) ১৯১৯
b) ১৯১৯
c) ১৯৪৫
d) ১৯৪৬
✅ উত্তর: c) ১৯৪৫
3) হিটলার নিজেকে কি নামে ঘোষণা করেন?
a) ফ্যুয়েরার
b) ইল-ডুচে
c) এলিট গার্ডস
d) গেস্টাপো
✅ উত্তর: a) ফ্যুয়েরার
4) কত খ্রিস্টাব্দে রুশ-জার্মান আক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
a) ১৯৩৬
b) ১৯৩৮
c) ১৯৩৯
d) ১৯৪১
✅ উত্তর: c) ১৯৩৯
5) রাশিয়ার সেনাবাহিনী কে বলা হত—
a) ঝটিকা বাহিনী
b) লালফৌজ
c) গেস্টাপো
d) ব্ল্যাক শার্ট
✅ উত্তর: b) লালফৌজ
6) ডি-ডে বা মুক্তি দিবস এর তারিখটি হলো ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের—
a) ৫ জুন
b) ৬ জুন
c) ৭ জুন
d) ৮ জুন
✅ উত্তর: b) ৬ জুন
7) রুমের নীতি ঘোষণা করে—
a) আমেরিকা
b) রাশিয়া
c) ইংল্যান্ড
d) ফ্রান্স
✅ উত্তর: a) আমেরিকা
8) ওয়ারশ যুক্তির নেতৃত্বে ছিল—
a) ইংল্যান্ড
b) রাশিয়া
c) ফ্রান্স
d) আমেরিকা
✅ উত্তর: b) রাশিয়া
9) হিরোশিমা দিবস পালিত হয়—
a) ২ আগস্ট
b) ৩ আগস্ট
c) ৬ আগস্ট
d) ১৫ আগস্ট
✅ উত্তর: c) ৬ আগস্ট
10) দড়ি বাধা কাষ্ঠ ছিল যে দলের প্রতীক—
a) নাৎসি
b) ফ্যাসিস্ট
c) ডেমোক্রেটিক
d) রক্ষণশীল
✅ উত্তর: b) ফ্যাসিস্ট
11) স্পেনের শাসক ছিলেন—
a) লেলিন
b) পোপ
c) ফ্রাঙ্কো
d) চার্চিল
✅ উত্তর: c) ফ্রাঙ্কো
12) ভাইমার প্রজাতন্ত্র কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?
a) জার্মানিতে
b) আমেরিকায়
c) ইংল্যান্ডে
d) রাশিয়ায়
✅ উত্তর: a) জার্মানিতে
13) হিটলার কোথায় আক্রমণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়?
a) অস্ট্রিয়া
b) পোল্যান্ড
c) চেকোস্লোভাকিয়া
d) রাইনল্যান্ড
✅ উত্তর: b) পোল্যান্ড
14) মার্শাল পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল—
a) আমেরিকা
b) রাশিয়া
c) ইংল্যান্ড
d) ফ্রান্স
✅ উত্তর: a) আমেরিকা
15) হিরোশিমায় আনবিক বোমা বর্ষণ হয়—
a) ২ আগস্ট
b) ৪ আগস্ট
c) ৬ আগস্ট
d) ৯ আগস্ট
✅ উত্তর: c) ৬ আগস্ট
16) জাপান পার্ল হারবারে বোমা বর্ষণ করে—
a) ১৯৩৯ খ্রি
b) ১৯৪১ খ্রি
c) ১৯৪৩ খ্রি
d) ১৯৪৫ খ্রি
✅ উত্তর: b) ১৯৪১ খ্রি

সত্য মিথ্যা বলো I দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর |Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Question and Answer:
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]
- জার্মানিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানে চার্চিল প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
👉 মিথ্যা — চার্চিল ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। জার্মানিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানে হিটলার প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
2) মহামন্দা শুরু হয় ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে।
👉 সত্য — এটি ছিল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা যা ১৯২৯ সালে শুরু হয়।
3) জার্মান সেনাপতি রোমেল মরুভূমির শৃগাল নামে পরিচিত।
👉 সত্য — জার্মান ফিল্ড মার্শাল এরউইন রোমেলকে “Desert Fox” বা “মরুভূমির শৃগাল” বলা হত।
4) স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধে জার্মানি জয় লাভ করে।
👉 মিথ্যা — স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন জয় লাভ করে, এবং এটি ছিল জার্মানির বড় পরাজয়।
5) আমেরিকা প্রথম থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।
👉 মিথ্যা — আমেরিকা শুরুতে নিরপেক্ষ ছিল এবং পরে ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে জাপানের হামলার পর যুদ্ধে যোগ দেয়।
6) ইয়াল্টা চুক্তি হয় রাশিয়ায়।
👉 সত্য — ইয়াল্টা সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে ইউক্রেন) একটি রিসোর্ট শহর ছিল, যেখানে ১৯৪৫ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অতি সংক্ষিপ্ত I দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর |Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Question and Answer:
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]
- মুসোলিনি কে ছিলেন?
মুসোলিনি ছিলেন ইতালির একনায়ক ও ফ্যাসিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।
2) কে কবে ফ্যাসিস্ট দলের প্রতিষ্ঠা করেন?
বেনিতো মুসোলিনি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্যাসিস্ট দল প্রতিষ্ঠা করেন।
3) ড্রেক্সলার কে ছিলেন?
অ্যান্টন ড্রেক্সলার ছিলেন জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, যা পরে নাৎসি দলে রূপান্তরিত হয়।
4) নাৎসি দলের প্রতীক চিহ্ন কী ছিল?
নাৎসি দলের প্রতীক ছিল বাঁকানো স্বস্তিক চিহ্ন, যাকে হাকেনক্রয়েজ বলা হয়।
5) ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি কী?
ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি ছিল একটি মার্কিন নীতি যার মাধ্যমে যুদ্ধরত দেশগুলি নগদ অর্থে অস্ত্র কিনে নিজে তা পরিবহন করত।
6) কারা কবে পার্ল হারবারে বোমাবর্ষণ করে?
জাপান ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর পার্ল হারবারে বোমাবর্ষণ করে।
7) কবে কোথায় প্রথম আণবিক বোমা বর্ষণ হয়?
১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম আণবিক বোমা ফেলা হয়।
8) আনরা (UNRRA) কী?
UNRRA বা United Nations Relief and Rehabilitation Administration ছিল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা যুদ্ধোত্তর সময়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রদান করত।
9) উগ্র জাতীয়তাবাদের একটি উদাহরণ দাও।
হিটলারের নেতৃত্বে জার্মান নাৎসিবাদ ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
10) কোন চুক্তিটি অ্যান্টি-কমিন্টারন চুক্তি নামে পরিচিত?
১৯৩৬ সালে জার্মানি ও জাপানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি অ্যান্টি-কমিন্টারন চুক্তি নামে পরিচিত।
11) জেনেভা সম্মেলন কবে হয়?
জেনেভা সম্মেলন ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়।
12) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি কবে হয়?
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
13) হিটলার কবে রাইনল্যান্ড দখল করে?
হিটলার ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে রাইনল্যান্ড দখল করে।
14) NATO কবে গঠিত হয়?
NATO (North Atlantic Treaty Organization) ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়।
15) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে গঠিত দুটি মৈত্রী জোট অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তি কোন কোন দেশ নিয়ে গঠিত হয়?
অক্ষশক্তি গঠিত হয় জার্মানি, ইটালি ও জাপানকে নিয়ে; মিত্রশক্তি গঠিত হয় ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও পরবর্তীতে আমেরিকাকে নিয়ে।
16) রুশ লাল ফৌজ গঠনে গৃহীত নীতির নাম কী?
এই নীতির নাম ছিল “যুদ্ধ কমিউনিজম” (War Communism)।
17) ইটালি কবে জাতিপুঞ্জ ত্যাগ করে?
ইটালি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জ ত্যাগ করে।
18) জার্মানি কত খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জ ত্যাগ করে?
জার্মানি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জ ত্যাগ করে।
19) কবে ও কাদের মধ্যে রোম-বার্লিন অক্ষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ইটালির মধ্যে রোম-বার্লিন অক্ষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
20) প্যারিসের শান্তি সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়?
প্যারিসের শান্তি সম্মেলন ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী I দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর |Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Question and Answer:
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 2 ]
1) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপের কয়েকটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সেখানকার শাসকের নাম লেখ:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে একাধিক একনায়কতান্ত্রিক শাসন গড়ে ওঠে। যেমন, ইতালিতে মুসোলিনি, জার্মানিতে হিটলার এবং স্পেনে ফ্রাঙ্কো।
2) ব্ল্যাক শার্ট সম্পর্কে কি জানো:
ব্ল্যাক শার্ট ছিল ইতালির ফ্যাসিস্ট বাহিনী, যা মুসোলিনির নেতৃত্বে গঠিত হয়। তারা গণআন্দোলন দমন ও শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
3) ফ্যাসিস্ট ও নাৎসি দলের সর্বোচ্চ নেতা কে কি বলা হতো?
ফ্যাসিস্ট দলের সর্বোচ্চ নেতাকে বলা হতো “ইল ডুচে” (মুসোলিনি) এবং নাৎসি দলের নেতাকে বলা হতো “ফ্যুয়েরার” (হিটলার)।
4) নাৎসি দলের কয়েকটি প্রধান শাখার নাম লেখ:
নাৎসি দলের প্রধান শাখাগুলি হলো SS (Schutzstaffel), SA (Sturmabteilung), Gestapo (গুপ্তচর সংস্থা) এবং হিটলার যুব বাহিনী।
5) মুসোলিনি ইতালির গুরুত্বপূর্ণ কোন অঞ্চল কবে দখল করে?
মুসোলিনি ১৯৩৫ সালে আফ্রিকার ইথিওপিয়া (অবশ্যই অ্যাবিসিনিয়া নামে পরিচিত) অঞ্চল দখল করেন। এটি ছিল তার সাম্রাজ্য বিস্তারের অংশ।
6) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে হিটলার কোন কোন স্থান দখল করেন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে হিটলার রাইনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেটেনল্যান্ড অঞ্চল দখল করেন।
7) হিটলার কবে পোল্যান্ড আক্রমণ করেন?
হিটলার ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। এই আক্রমণের মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে।
8) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার তারিখ উল্লেখ কর:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর, যখন জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে।
9) পার্ল হারবার এর ঘটনাটি উল্লেখ কর:
১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর, জাপান আমেরিকার পার্ল হারবার নৌঘাঁটিতে আকস্মিকভাবে বিমান হামলা চালায়। এর ফলে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
10) কবে কাদের উদ্যোগে পোটসডাম সম্মেলন ও অনুষ্ঠিত হয়?
১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্যোগে পোটসডাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হয়।
11) ফালটন বক্তৃতা সম্পর্কে কি জানো?
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ফালটন শহরে একটি বক্তৃতা দেন, যেখানে তিনি “লোহার পর্দা” শব্দটি ব্যবহার করেন। এটি ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনাকে নির্দেশ করে।
12) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কয়েকটি সামরিক জোটের নাম লেখ:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত সামরিক জোটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো NATO (১৯৪৯) এবং ওয়ারশ চুক্তি (১৯৫৫)।
13) ঠান্ডা লড়াই কি?
ঠান্ডা লড়াই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আদর্শগত ও সামরিক প্রতিযোগিতা, যা সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে বহু বছর ধরে প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত ছিল।
14) উগ্র জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?
উগ্র জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি চরম দেশপ্রেমের আদর্শ, যেখানে নিজের জাতিকে সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয় এবং অন্য জাতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়।
15) আন্তর্জাতিকতাবাদ কাকে বলে?
আন্তর্জাতিকতাবাদ এমন একটি মতবাদ, যেখানে বিশ্বের সমস্ত জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর জোর দেওয়া হয়।
16) ইং ফরাসি তোষণ নীতি কি?
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারের আগ্রাসন ও দাবি মেনে নিয়ে যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিল, এ নীতিকেই বলা হয় তোষণ নীতি। এটি হিটলারকে আরও আগ্রাসী করে তোলে।
17) ফ্যাসিবাদ কাকে বলে?
ফ্যাসিবাদ একটি একনায়কতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতবাদ, যা ব্যক্তিস্বাধীনতা হ্রাস করে রাষ্ট্রের পূর্ণ কর্তৃত্ব কায়েমে বিশ্বাসী এবং বিরোধীদের দমন করে।
18) নাৎসি বাদ কী?
নাৎসি বাদ হলো হিটলারের নেতৃত্বে গঠিত জার্মান রাজনৈতিক মতবাদ, যেখানে জাতিগত শুদ্ধতা, ইহুদিবিদ্বেষ, সামরিক শক্তি এবং একনায়কতন্ত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিশ্লেষণ ধর্মী প্রশ্নাবলী I দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর |Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Question and Answer:
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 4 ]
১) ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে কি জানো?
ভূমিকা:
ফ্যাসিবাদ ছিল ২০শতকের শুরুর এক উগ্র ও কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক মতবাদ, যা ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে রাষ্ট্রীয় একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল।
মূল বিষয়বস্তু:
- ফ্যাসিবাদ প্রথম উদ্ভব ঘটে ইতালিতে মুসোলিনির নেতৃত্বে (১৯১৯ সালে)।
- এটি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী।
- এই মতবাদে নেতৃত্ব থাকে একজন ব্যক্তির হাতে – একনায়কতন্ত্র।
- জাতীয়তাবাদ ও সামরিক শক্তিকে অতিরঞ্জিত গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- ফ্যাসিবাদ রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে।
- শ্রমিক সংগঠন, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকার এখানে গুরুত্বহীন।
- এটির প্রতীক ছিল ‘দড়ি বাঁধা কাষ্ঠ’ (fasces)।
উপসংহার:
ফ্যাসিবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল, কারণ এটি উগ্র জাতীয়তাবাদ ও যুদ্ধবাজ নীতিকে উৎসাহিত করেছিল।
২) নাৎসি বাদ সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা কর।
ভূমিকা:
নাৎসিবাদ বা জাতীয় সমাজতন্ত্র ছিল জার্মানির এক উগ্র রাজনৈতিক মতবাদ, যা হিটলারের নেতৃত্বে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।
মূল বিষয়বস্তু:
- নাৎসি দল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৯ সালে অ্যান্টন ড্রেক্সলারের মাধ্যমে।
- হিটলার ১৯২০-এ দলে যোগ দিয়ে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৩৩-এ চ্যান্সেলর হন।
- এটি আর্য জাতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করত এবং ইহুদিদের নির্মূল করার পরিকল্পনা নেয়।
- গণতন্ত্রবিরোধী ও ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী এই মতবাদ সংবাদপত্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ চাপায়।
- নাৎসিদের প্রতীক ছিল সোয়াস্তিকা।
- ‘ফুয়েরার’ বা সর্বোচ্চ নেতার পদ গ্রহণ করেন হিটলার।
- তারা জার্মান অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করলেও মানবিক মূল্য ছিল ভয়ঙ্কর।
উপসংহার:
নাৎসিবাদ বিশ্বের ইতিহাসে ভয়ঙ্কর এক অধ্যায়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং মানবতা বিধ্বংসী ঘটনাবলির সূচনা ঘটায়।
৩) কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়?
ভূমিকা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল ২০শ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ ও বিস্তৃত যুদ্ধ, যার সূচনা একটি বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে হয়।
মূল বিষয়বস্তু:
- ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ সালে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন।
- জার্মানি তাদের ‘লেবেনসরাউম’ নীতির মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ দখল করতে চায়।
- পোল্যান্ডের উপর এই আকস্মিক আগ্রাসনকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মেনে নেয়নি।
- ৩রা সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
- এই ঘটনার মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
- রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি থাকায় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রাথমিকভাবে নিরপেক্ষ ছিল।
উপসংহার:
পোল্যান্ড আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়, যা পরবর্তী ছয় বছর গোটা বিশ্বকে রক্তাক্ত করে তোলে।
৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মিত্র পক্ষের প্রধান রাষ্ট্র গুলির নাম লেখ।
ভূমিকা:
মিত্র শক্তি (Allied Powers) ছিল সেই রাষ্ট্রগুলো যারা ফ্যাসিবাদ ও নাৎসি মতবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করেছিল।
মূল বিষয়বস্তু:
- যুক্তরাজ্য (ইংল্যান্ড)
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
- সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া)
- ফ্রান্স
- চীন
- কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া পরে এই শক্তিতে যুক্ত হয়।
উপসংহার:
এই দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণতন্ত্র, মানবতা এবং শান্তির পক্ষে লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছিল।
৫) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অক্ষশক্তির প্রধান রাষ্ট্র গুলির নাম লেখ।
ভূমিকা:
অক্ষশক্তি (Axis Powers) ছিল সেই রাষ্ট্রগুলোর জোট যারা বিশ্বে একনায়কতন্ত্র ও সামরিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে যুদ্ধ করেছিল।
মূল বিষয়বস্তু:
- জার্মানি (হিটলার)
- ইতালি (মুসোলিনি)
- জাপান (হিরোহিতো)
- হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া পরবর্তীতে যোগ দেয়।
উপসংহার:
অক্ষশক্তির লক্ষ্য ছিল বিশ্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করা, কিন্তু তাদের আগ্রাসী নীতি পরাজয়ের মুখে পড়ে।
৬) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে জার্মানি কোন কোন দেশ দখল করে?
ভূমিকা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে জার্মানি অত্যন্ত কৌশলীভাবে একের পর এক দেশ দখল করতে শুরু করে, যা ইউরোপের রাজনৈতিক ভারসাম্য ভেঙে দেয়।
মূল বিষয়বস্তু:
- ১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়া অধিগ্রহণ করে (Anschluss)।
- ১৯৩৯ সালে চেকোস্লোভাকিয়ার সুডেটেনল্যান্ড এবং পরে পুরো দেশ দখল করে।
- ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড আক্রমণ করে যুদ্ধ শুরু করে।
- ১৯৪০ সালে ডেনমার্ক ও নরওয়ে দখল করে।
- এরপর বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সও দখল করে ফেলে।
- তারা Blitzkrieg বা ‘ঝটিকা আক্রমণ’ নীতি অনুসরণ করে দ্রুত বিজয় অর্জন করে।
উপসংহার:
জার্মানির আগ্রাসী দখল নীতি ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দেয় এবং বিশ্বযুদ্ধকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
৭) পার্ল হারবার ঘটনার বিবরণ দাও।
ভূমিকা:
পার্ল হারবার আক্রমণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনে।
মূল বিষয়বস্তু:
- ৭ই ডিসেম্বর, ১৯৪১ সালে জাপান হাওয়াই দ্বীপের পার্ল হারবারে মার্কিন নৌ ঘাঁটিতে আকস্মিক আক্রমণ চালায়।
- জাপানের লক্ষ্য ছিল মার্কিন নৌবাহিনীকে অক্ষম করে দেওয়া, যাতে তারা প্রশান্ত মহাসাগরে বাধা না দিতে পারে।
- আক্রমণে প্রায় ২,৪০০ মার্কিন নাগরিক নিহত হন এবং বহু যুদ্ধজাহাজ ও বিমান ধ্বংস হয়।
- এটি ছিল যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই এক চমকপ্রদ ও ধ্বংসাত্মক আক্রমণ।
- পরদিন, ৮ ডিসেম্বর, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
- এই ঘটনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির অংশ হয়ে ওঠে।
উপসংহার:
পার্ল হারবার আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার প্রবেশের দ্বার খুলে দেয় এবং যুদ্ধ আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করে।
৮) হিটলারের শেষ জীবনে কি পরিণতি হয়?
ভূমিকা:
যুদ্ধ শেষে হিটলারের জীবনের করুণ পরিণতি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে।
মূল বিষয়বস্তু:
- ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে সোভিয়েত বাহিনী বার্লিন ঘেরাও করে ফেলে।
- হিটলার তার বাংকারে আত্মগোপন করে থাকেন।
- ৩০ এপ্রিল, ১৯৪৫ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন তার স্ত্রী ইভা ব্রাউনসহ।
- মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলতে বলেন।
- হিটলারের মৃত্যুর পরে নাৎসি জার্মানির পতন ঘটে।
- ৮ মে, ১৯৪৫ – জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ইউরোপে যুদ্ধ শেষ হয়।
উপসংহার:
হিটলারের মৃত্যু একনায়কতন্ত্রের ভয়াবহ ফলাফলের চূড়ান্ত পরিণতি, যা বিশ্বজুড়ে শিক্ষা দেয় উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্পর্কে।
৯) রুম-বার্লিন-টোকিও অক্ষ চুক্তি সম্পর্কে কি জানো?
ভূমিকা:
রুম-বার্লিন-টোকিও অক্ষ চুক্তি ছিল এক সামরিক ও রাজনৈতিক জোট, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির ভিত্তি স্থাপন করে।
মূল বিষয়বস্তু:
- ১৯৩৬ সালে ইতালি ও জার্মানি একটি মৈত্রী চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যাকে ‘অক্ষ চুক্তি’ বলা হয়।
- পরে, ১৯৪০ সালে এই চুক্তিতে জাপানও যুক্ত হয়।
- এই চুক্তির মাধ্যমে তিনটি দেশ একে অপরকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।
- এদের মধ্যে ছিল ফ্যাসিবাদ, সামরিকতন্ত্র এবং সম্প্রসারণবাদী নীতি।
- এই তিনটি দেশ বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে।
উপসংহার:
রুম-বার্লিন-টোকিও অক্ষ চুক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল বিরোধী শিবির গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
১০) ঠান্ডা লড়াই কি?
ভূমিকা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শুরু হয় এক দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক ও আদর্শিক দ্বন্দ্ব, যা ইতিহাসে ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত।
মূল বিষয়বস্তু:
- এটি ছিল দুই পরাশক্তি – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (পুঁজিবাদ) ও সোভিয়েত ইউনিয়ন (সাম্যবাদ) – এর মধ্যে মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব।
- কোনো সরাসরি যুদ্ধ না হলেও দুপক্ষ অস্ত্র প্রতিযোগিতা, গুপ্তচরবৃত্তি ও প্রভাব বিস্তারের লড়াই চালায়।
- এই সময়ে গঠিত হয় ন্যাটো ও ওয়ারশ চুক্তির মতো সামরিক জোট।
- বার্লিন সংকট, কোরিয়া যুদ্ধ, কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট ছিল এর গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
- এটি প্রায় ৪৫ বছর ধরে চলে (১৯৪৭–১৯৯১)।
উপসংহার:
ঠান্ডা লড়াই বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্র বদলে দেয় এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সামরিক কৌশলের নতুন যুগ সূচিত করে।
রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী I দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (ষষ্ঠ অধ্যায়) নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর |Class 9 History Dwitiyo Biswajuddho O Tarpor Question and Answer:
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 8 ]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ, তার বিশ্বজনীনতা এবং বহুমুখী প্রভাবসমূহ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ভূমিকা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯–১৯৪৫) ছিল ২০শ শতাব্দীর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও বৈশ্বিক যুদ্ধ। এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভুল সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক বিভ্রান্তির ফলস্বরূপ সংঘটিত হয়। যুদ্ধটি গোটা পৃথিবীকে মানবিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ঠেলে দেয় এবং ইতিহাসের ধারাকে আমূল পরিবর্তন করে।
যুদ্ধের কারণসমূহ:
- ভার্সাই চুক্তির অবিচার: ১৯১৯ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি জার্মানির ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করে যা অসন্তোষ ও প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতার জন্ম দেয়।
- ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের উত্থান: মুসোলিনি ও হিটলারের নেতৃত্বে চরম ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী মতবাদের প্রসার ঘটে।
- মহামন্দা (১৯২৯): অর্থনৈতিক ধস জনগণকে উগ্র আদর্শে আকৃষ্ট করে।
- তোষণ নীতি: ইউরোপের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি হিটলারকে প্রশমিত করতে গিয়ে তার আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দেয়।
- অনাক্রমণ চুক্তি ও পোল্যান্ড আক্রমণ: ১৯৩৯ সালে হিটলার ও স্তালিন চুক্তি করলেও হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন, যার ফলে যুদ্ধ শুরু হয়।
যুদ্ধের বিশ্বজনীনতা:
- যুদ্ধ কেবল ইউরোপের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং এশিয়া, আফ্রিকা, ও আমেরিকা মহাদেশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।
- জাপান পার্ল হারবার আক্রমণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে টেনে আনে।
- সোভিয়েত ইউনিয়নের জার্মানির বিরুদ্ধে ভূমিকা ছিল যুদ্ধের মোড় ঘোরানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- উপনিবেশভুক্ত দেশগুলি যেমন ভারত, আফ্রিকা ইত্যাদি থেকেও লাখ লাখ সৈন্য যুদ্ধে অংশ নেয়।
- যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করে।
যুদ্ধের বহুমুখী প্রভাব:
- ✅ রাজনৈতিক: অক্ষশক্তির পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয় (ঠান্ডা লড়াই)।
- ✅ অর্থনৈতিক: ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের মুখে পড়ে (যেমন – মার্শাল পরিকল্পনা)।
- ✅ সামাজিক: ৭ কোটিরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
- ✅ প্রযুক্তিগত: পারমাণবিক অস্ত্রের আবিষ্কার ও ব্যবহার মানব সভ্যতাকে চিরতরে পাল্টে দেয়।
- ✅ রাজনৈতিক জোট: জাতিসংঘের সৃষ্টি হয় শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে।
- ✅ মানবাধিকার আন্দোলন: নাৎসি ঘৃণার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মানবিক আন্দোলনের সূচনা হয়।
উপসংহার:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল এক গভীর বৈশ্বিক সংকট যা মানবজাতির ইতিহাসে একটি মোড় ঘোরানো অধ্যায়। এর কারণ যেমন জটিল, তেমনই এর প্রভাব ছিল সর্বব্যাপী। যুদ্ধটি বিশ্বকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, কিন্তু এর মধ্য দিয়েই জাতিসংঘ, মানবাধিকার চেতনা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নতুন দিগন্তও উন্মোচিত হয়।
2) প্রশ্ন: ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আদর্শের সংঘাতে পরিচয় দাও।
ভূমিকা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব বিশ্বে রাজনৈতিক আদর্শগত সংঘাত সবচেয়ে তীব্র ছিল গণতন্ত্র এবং উগ্র একনায়কতান্ত্রিক মতবাদের মধ্যে। এই দুই বিপরীত ধারার সংঘর্ষ গোটা ইউরোপ এবং বিশ্ব রাজনীতিকে অস্থির করে তোলে।
মূল আলোচনা
জাতিগত বৈষম্য বনাম সমতা:
নাৎসি মতবাদে জার্মান জাতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করা হতো এবং ইহুদি, জিপসি প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো হয়; পক্ষান্তরে গণতন্ত্র জাতিগত সমতার পক্ষে কাজ করে।
স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন:
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকে, আর ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদে আদালতকে সরকার নিয়ন্ত্রিত ও নির্দয় হিংস্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বৈদেশিক নীতিতে পার্থক্য:
গণতন্ত্র শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী হলেও ফ্যাসিস্ট ও নাৎসি রাষ্ট্র আক্রমণ ও যুদ্ধের মাধ্যমে বিস্তারবাদী নীতি গ্রহণ করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে এই সংঘাত চূড়ান্ত রূপ নেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গণতন্ত্র রক্ষার্থে যুদ্ধের ময়দানে নামে।
অবশেষে ১৯৪৫ সালে গণতন্ত্র বিজয়ী হয় এবং নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট শক্তির পতন ঘটে।
জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে।
এই সংঘাত বিশ্বকে বুঝিয়ে দেয়, গণতন্ত্রই শান্তি ও মানবিক সভ্যতার ভবিষ্যৎ।
উপসংহার:
ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের সংঘাত ছিল কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি ছিল মানবিক মূল্যবোধ বনাম নির্মম স্বেচ্ছাচারিতার দ্বন্দ্ব। ইতিহাস প্রমাণ করেছে—গণতন্ত্র, যতই দুর্বল হোক, মানুষ শেষ পর্যন্ত তার দিকেই ফিরে যায়।