বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন-উত্তর পর্ব : রুশ বিপ্লব, বিশ্বযুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদের যুগে ইউরোপের রূপান্তর (Class 9 History Chapter 5 Bengali )

প্রিয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে যে, বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প ভিত্তিক ,সংক্ষিপ্ত ,অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর সন্নিবেশিত করা হয়েছে এখানে।
এই পোষ্টের মাধ্যমে তোমাদের নবম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে ১,২,৪ এবং ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা আশা করি এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষার জন্য খুবই কাজে আসবে ।

বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) [প্রতিটি প্রশ্নের মান 1]

1) রুশকরা গির্জাকে যে ধর্ম কর দিত তা হল—
a) টাইদ
b) কর্ভি
c) টাইলে
d) গ্যাবেলা
উত্তর: a) টাইদ


2) কোন দেশের পুলিশ বাহিনী প্রিটোরিয়ান গার্ড নামে পরিচিত ছিল?
a) জার্মানি
b) রোম
c) রাশিয়া
d) স্পেন
উত্তর: b) রোম


3) কোন জারের আমলে রুশ বিপ্লব (১৯১৭ খ্রি) সংঘটিত হয়?
a) প্রথম আলেক্সান্ডার
b) তৃতীয় আলেক্সান্ডার
c) দ্বিতীয় নিকোলা
d) প্রথম নিকোলা
উত্তর: c) দ্বিতীয় নিকোলা


4) খাদ্যের দাবিতে রাশিয়ার শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের—
a) ১ মার্চ
b) ৮ মার্চ
c) ১ মে
d) ২১ মে
উত্তর: b) ৮ মার্চ


5) রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়—
a) ৮ মার্চ
b) ২১ জুলাই
c) ১২ অক্টোবর
d) ৭ নভেম্বর
উত্তর: d) ৭ নভেম্বর


6) এপ্রিল থিসিস ঘোষনা করেন—
a) লেলিন
b) ফ্রাঙ্কো
c) হিটলার
d) ট্রটস্কি
উত্তর: a) লেলিন


7) যার দ্বিতীয় নিকলা আজ পদত্যাগ করেন—
a) ১০ মার্চ
b) ১১ মার্চ
c) ১২ মার্চ
d) ১৩ মার্চ
উত্তর: c) ১২ মার্চ


8) বিশ্বের প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্র হল—
a) রাশিয়া
b) পোল্যান্ড
c) চীন
d) জার্মানি
উত্তর: a) রাশিয়া


9) কোন সন্ধিকে জবরদস্তি মূলক সন্ধি বলা হয়?
a) ভার্সাই সন্ধি
b) সেভোরের সন্ধি
c) নিউলির সন্ধি
d) ট্রিয়াননের সন্ধি
উত্তর: a) ভার্সাই সন্ধি


10) ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন—
a) হিটলার
b) হুভার
c) স্ট্রেসমান
d) ফ্রেডারিক ইবার্ট
উত্তর: d) ফ্রেডারিক ইবার্ট


11) স্পেনের গৃহযুদ্ধের শেষে সে দেশের ক্ষমতা দখল করেন—
a) হিটলার
b) ফ্রাঙ্কো
c) প্রাইমা-ডি-রিভেরা
d) ম্যানুয়াল আজানা
উত্তর: b) ফ্রাঙ্কো


12) রাশিয়ার আইনসভার নাম ছিল—
a) কোরটেস
b) পার্লামেন্ট
c) স্টেটস জেনারেল
d) ডুমা
উত্তর: d) ডুমা


13) রাশিয়ায় ______ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিপ্লব সংঘটিত হয়—
a) ১৮৯৪
b) ১৯০৫
c) ১৯১৭
d) ১৯২৫
উত্তর: b) ১৯০৫


14) ______ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়—
a) ১৯১৭
b) ১৯১৮
c) ১৯১৯
d) ১৯২০
উত্তর: c) ১৯১৯


15) পপুলার ফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়—
a) রাশিয়ায়
b) আমেরিকায়
c) জার্মানিতে
d) স্পেনে
উত্তর: d) স্পেন

বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন-উত্তর [প্রতিটি প্রশ্নের মান 1 ]

১) কে প্রথম যার উপাধি গ্রহণ করেন?
ফ্রান্সের লুই চৌদ্দশ প্রথম যিনি রাজা হিসেবে উপাধি গ্রহণ করেন।


২) কে কোন দেশে রোমানভ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন?
মিখাইল ফিয়োডরোভিচ রাশিয়ায় রোমানভ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।


৩) করভি কি?
করভি হলো রুশ খ্রিস্টান গির্জার করের একটি ধরন।


৪) কুলাক কাদের বলা হত?
কুলাক বলতে রাশিয়ার ধনী কৃষকগণকে বুঝানো হত।


৫) প্রাভদা কি?
প্রাভদা হলো বলশেভিক দলের একটি দৈনিক পত্রিকা।


৬) যার দ্বিতীয় নিকোলাসের পদত্যাগের পর কে রাশিয়ার ক্ষমতা দখল করেন?
দ্বিতীয় নিকোলাসের পদত্যাগের পর রাশিয়ার ক্ষমতা দখল করে প্রভিন্সিয়াল সরকার।


৭) পেট্রোগ্রাদে গোল যগের কারণে কোথায় রাজধানী স্থানান্তর করা হয়?
পেট্রোগ্রাদে গোলযুদ্ধের কারণে রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কোতে স্থানান্তর করা হয়।


৮) রাশিয়ায় কে কবে প্রথম সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন?
ভ্লাদিমির লেলিন ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় প্রথম সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।


৯) সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর রাশিয়ার কি নতুন নাম হয়?
সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর রাশিয়ার নাম হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।


১০) কার উদ্যোগে কোথায় প্রথম কমিন্টার্ন প্রতিষ্ঠিত হয়?
লেনিনের উদ্যোগে মস্কোতে প্রথম কমিন্টার্ন প্রতিষ্ঠিত হয়।


১১) কে সেরাযেভোর হত্যাকান্ড সংগঠিত করেন?
সেরাযেভোর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেন বোমাবাজ নায়ডায়েভ।


১২) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কোনটি?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল আর্চডিউক আসলভাইজের হত্যাকাণ্ড।


১৩) কারা কাকে আততায়ীর জাতি বলে অভিহিত করেন?
জার্মানি সার্বিয়াকে আততায়ীর জাতি বলে অভিহিত করে।


১৪) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পূর্ব রণাঙ্গনে কোন কোন যুদ্ধে পরাজিত হয়?
জার্মানি পূর্ব রণাঙ্গনে ট্যানেনবার্গ ও মাসুরিয়ান লেক যুদ্ধে পরাজিত হয়।


১৫) কবে কোন সন্ধির দ্বারা রাশিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সরে যায়?
রাশিয়া ১৯১৭ সালে ব্রেস্ট-লিটভস্ক সন্ধির দ্বারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সরে যায়।


১৬) কবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে ১৯১৮ সালে।


১৭) কিভাবে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের পতন ঘটে?
কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের পতন ঘটে জনগণের বিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর প্রত্যাখ্যানের কারণে।


১৮) ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির কোন অঞ্চল ফ্রান্সকে দেওয়া হয়?
ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে আলসেস-লোরেইন অঞ্চল ফ্রান্সকে দেওয়া হয়।


১৯) কবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়?
জাতিসংঘ ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।


২০) মহামন্দার শিকার হওয়া ইউরোপের কয়েকটি দেশের নাম লেখ।
জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি মহামন্দার শিকার হয়।


২১) হিটলার কবে পোল্যান্ড আক্রমণ করেন?
হিটলার ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করেন।


২২) ঘুষটাভ ইস্ট্রেস মান কে ছিলেন?
গুস্তাভ ইস্ট্রেসমান ছিলেন জার্মানির একজন প্রধান কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ।


২৩) নাৎসি বিপ্লব কি?
নাৎসি বিপ্লব হলো হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে ফ্যাসিবাদী দলনেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া।

বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন-উত্তর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী [প্রতিটি প্রশ্নের মান ২]

1) জারতন্ত্র কী?
সংজ্ঞা: জারতন্ত্র ছিল রাশিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক রাজতন্ত্র, যেখানে “জার” (Czar) বা সম্রাট ছিল সর্বোচ্চ শাসক।
এই শাসনব্যবস্থায় জনগণের কোনও রাজনৈতিক অধিকার ছিল না, এবং জারের আদেশই ছিল সর্বোচ্চ আইন। এটি দীর্ঘদিন রাশিয়ায় চরম বৈষম্য ও সামাজিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে।


2) জারতন্ত্রের আমলে রাশিয়ার অভিজাত সম্প্রদায় কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেত?
রাশিয়ার অভিজাতরা জমি, রাজস্ব ও সামরিক পদাধিকার পেত।
তাদের জন্য কর-ছাড়, বিলাসবহুল জীবনধারা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিশ্চিত ছিল। তারা দরিদ্র কৃষক ও ভূমিদাসদের উপর শোষণ চালাত।


3) জারতন্ত্রের আমলে রাশিয়ার ভূমিদাসদের অবস্থা কেমন ছিল?
ভূমিদাসরা জমিদারের জমিতে বাধ্যতামূলক খাটুনি দিত।
তারা নিজের ইচ্ছায় বসবাসের স্থান বদলাতে পারত না, এবং তাদের প্রায় পশুর মতো ব্যবহার করা হত। এই অবস্থা বিপ্লবের জন্য সহানুভূতি তৈরি করে।


4) সাহিত্যে জারতন্ত্রের অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরেন এমন কয়েকজন রুশ সাহিত্যিকের নাম লেখ।
রুশ সাহিত্যিকদের মধ্যে টলস্টয়, দস্তয়েভস্কি, গোর্কি ও চেখভ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তাঁরা নিজেদের সাহিত্যকর্মে দারিদ্র্য, দমন-পীড়ন ও সামাজিক বৈষম্যের বাস্তবতা তুলে ধরেন। তাঁদের লেখায় জনগণের কষ্ট ও প্রতিবাদ প্রতিফলিত হয়েছে।


5) রাসপুতিন কে ছিলেন?
রাসপুতিন ছিলেন এক রহস্যময় সাধু ও চিকিৎসক, যিনি জার পরিবারের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা হয়ে ওঠেন।
তিনি জারিনার পুত্রের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করেন বলে রাজদরবারে তার প্রভাব বেড়ে যায়।
তাঁর দাপট রাশিয়ার রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা ও গণবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে।


6) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার কী পরিণতি হয়?
রাশিয়া বিশাল পরিমাণ সৈন্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
জনজীবনে অভাব, খাদ্যসংকট ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতি ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করে।


7) এপ্রিল থিসিস কী?
সংজ্ঞা: এপ্রিল থিসিস ছিল লেলিনের একটি রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র, যা ১৯১৭ সালে পেত্রোগ্রাদে উপস্থাপন করা হয়।
এতে “শান্তি, জমি ও রুটি” স্লোগান এবং “সমস্ত ক্ষমতা শ্রমিকদের হাতে” দেওয়ার কথা বলা হয়। এটি বলশেভিক বিপ্লবের দিকনির্দেশক দলিল হয়ে ওঠে।


8) নভেম্বর বিপ্লব কী?
১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর (রুশ ক্যালেন্ডার অনুসারে ২৫ অক্টোবর) বলশেভিকরা অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে।
এই বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শাসন শুরু হয়।
এটি “অক্টোবর বিপ্লব” নামেও পরিচিত।


9) রুশ বিপ্লবের ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাজনৈতিক প্রভাব কী হয়েছিল?
এই বিপ্লবের ফলে জারতন্ত্রের অবসান ঘটে ও বলশেভিকরা ক্ষমতায় আসে।
সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার সূচনা ঘটে।
বিশ্ব রাজনীতিতে সমাজতন্ত্র একটি শক্তিশালী ধারা হয়ে ওঠে।


10) নেপ (N.E.P) কী?
সংজ্ঞা: NEP বা New Economic Policy ছিল ১৯২১ সালে লেলিন কর্তৃক প্রবর্তিত এক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
এতে সীমিত পুঁজিবাদ অনুমোদিত হয় এবং কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেদের উৎপাদন ও বাণিজ্যে স্বাধীনতা পায়।
এটি রাশিয়ার ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে সাময়িকভাবে পুনরুজ্জীবিত করে।


11) সেরায়েভোর হত্যাকাণ্ড কী?
১৯১৪ সালে সার্ব জাতীয়তাবাদী গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ ফ্রান্স ফের্দিনান্দ ও তার স্ত্রীকে হত্যা করেন।
এই ঘটনাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ হয়ে ওঠে।
এটি ছিল জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সংঘর্ষের প্রতিফলন।


12) প্রথম যুদ্ধের সময় পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধের বিবরণ দাও।
পশ্চিম রণাঙ্গনে জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়।
মার্ন, ইপার্স ও সোম যুদ্ধ ছিল প্রধান।
ট্রেঞ্চ যুদ্ধের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ও অপচয় হয়।


13) কে কবে চৌদ্দ দফা শর্ত ঘোষণা করেন?
উড্রো উইলসন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে এই চৌদ্দ দফা ঘোষণা করেন।
এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার এক আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা ছিল।


14) উইলসনের চৌদ্দ দফা কী?
সংজ্ঞা: এই পরিকল্পনায় যুদ্ধোত্তর বিশ্বে জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণ, মুক্ত বাণিজ্য, সমুদ্রে স্বাধীনতা ও জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ছিল।
এই দফাগুলি যুদ্ধ বন্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে রচিত হয়।


15) প্যারিসের শান্তি সম্মেলনের প্রধান নেতৃত্ব কারা ছিলেন?
এই সম্মেলনের চার প্রধান নেতা ছিলেন – উড্রো উইলসন (আমেরিকা), লয়েড জর্জ (ইংল্যান্ড), জর্জ ক্লেমেন্সো (ফ্রান্স), ও ভিটোরিও অরল্যান্ডো (ইতালি)।
তাঁরা “The Big Four” নামে পরিচিত।


16) ভার্সাই সন্ধি কবে কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
১৯১৯ সালের ২৮ জুন জার্মানি ও মিত্রশক্তির মধ্যে এই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
এতে জার্মানিকে কড়া শর্তে পরাজিত দেশ হিসেবে দায়বদ্ধ করা হয়।


17) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা বলতে কী বোঝ?
সংজ্ঞা: এটি ছিল একটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়, যা আমেরিকার শেয়ার বাজার ধসের ফলে শুরু হয়।
এর ফলে কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


18) কালো বৃহস্পতিবার কী?
১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর আমেরিকার শেয়ার বাজার ধসে পড়ে, দিনটিকে “কালো বৃহস্পতিবার” বলা হয়।
এই দিন থেকেই বিশ্বব্যাপী মহামন্দার সূচনা হয়।


19) পোলিশ করিডর কী?
এই করিডরের মাধ্যমে পোল্যান্ডকে বাল্টিক সাগরের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়।
এর ফলে জার্মান ভূখণ্ড দুটি ভাগে বিভক্ত হয়, যা পরবর্তীতে হিটলারের ক্ষোভের কারণ হয়।


20) হেরেনভক তত্ত্ব কী?
সংজ্ঞা: হেরেনভক তত্ত্ব অনুযায়ী জার্মান জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
নাৎসিরা এই তত্ত্ব প্রচার করে অন্যান্য জাতিগুলিকে অধীনস্থ হিসেবে বিবেচনা করত।


21) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে হিটলার কখন কোন দেশ দখল করেন?
হিটলার ১৯৩৮ সালে অস্ট্রিয়া ও ১৯৩৯ সালে চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতেনল্যান্ড দখল করেন।
এরপর পোল্যান্ড আক্রমণ করেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটায়।

বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন-উত্তর বিশ্লেষণ ধর্মী প্রশ্নাবলী [প্রতিটি প্রশ্নের মান 4 ]

1) রাশিয়ার জনতা বাদী আন্দোলন সম্পর্কে কি জানো?
ভূমিকা:
১৯শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করে। এই আন্দোলনই জনতাবাদী আন্দোলন নামে পরিচিত।

মূল আলোচনা:

  • জনতাবাদী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামাঞ্চলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
  • এই আন্দোলনের নেতারা ‘নারোদানিক’ নামে পরিচিত ছিলেন।
  • তারা বিশ্বাস করতেন কৃষকদের মাঝে বিপ্লবী চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে।
  • ১৮৭৪ সালে হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা করেন।
  • কৃষকেরা এই ধারণা সহজে গ্রহণ করেনি এবং অনেক বিপ্লবী পুলিশে ধরাও পড়ে।
  • এর ফলে আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এটি ভবিষ্যতের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।
  • পরে এর মধ্য থেকেই “চেরনিশেভস্কি”, “বাকুনিন” ও “হেরজেন” প্রভাবিত নতুন নেতারা উঠে আসেন।
  • এ আন্দোলন থেকেই রাশিয়ায় বামপন্থী মতবাদের সূচনা হয়।

মূল্যায়ন:
যদিও জনতাবাদী আন্দোলন সরাসরি সফল হয়নি, তবুও এটি রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বীজ বপন করেছিল।


2) রুশ বিপ্লবের ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে পূর্বে রাশিয়ার শ্রমিকদের অবস্থা কেমন ছিল?


ভূমিকা:
রুশ বিপ্লবের পূর্বে শ্রমিকরা রাশিয়ার অন্যতম অবহেলিত জনগোষ্ঠী ছিল।

মূল আলোচনা:

  • তারা দীর্ঘ সময় অল্প মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হতো।
  • কারখানাগুলিতে কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।
  • শ্রমিকদের শ্রম আইন, বিশ্রাম বা স্বাস্থ্যসেবার কোনো সুযোগ ছিল না।
  • বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও খাদ্যের অভাব ছিল সাধারণ ঘটনা।
  • ধর্মঘট ও প্রতিবাদ আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা হতো।
  • “ব্লাডি সানডে” (১৯০৫)-এর ঘটনা শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের প্রকট উদাহরণ।
  • কারখানা মালিকদের সাথে সরকারি সংস্থার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল।
  • লেনিন ও বলশেভিকরা এই পরিস্থিতি বদলের প্রতিশ্রুতি দেন।

মূল্যায়ন:
শ্রমিকদের দুর্বিষহ অবস্থা ও বঞ্চনা রুশ বিপ্লবের অন্যতম প্রধান প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।


3) রুশ বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ার সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল?
ভূমিকা:
রুশ বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ার সমাজ ব্যবস্থায় ছিল প্রচণ্ড বৈষম্য ও শোষণ।

মূল আলোচনা:

  • সমাজ ছিল মূলত তিন ভাগে বিভক্ত – অভিজাত, মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র কৃষক-শ্রমিক।
  • অভিজাতরা জমিদার শ্রেণি ও রাজপরিবার ঘনিষ্ঠ ছিল।
  • দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকরা সমাজে অত্যন্ত অবহেলিত ছিল।
  • ভূমি দাসত্ব তখনো রাশিয়ায় বিদ্যমান ছিল (১৮৬১-তে রদ হলেও প্রভাব ছিল)।
  • শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিতে অভিজাত ও সাধারণের মাঝে ফারাক ছিল।
  • চার্চের আধিপত্য ও ধর্মীয় কুসংস্কার সাধারণ জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করতো।
  • রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না।
  • নারী ও শিশুরাও অবহেলার শিকার ছিল।

মূল্যায়ন:
এই ভয়াবহ বৈষম্যমূলক সামাজিক অবস্থা ছিল রুশ বিপ্লবের এক বড় কারণ।


4) বহির্বিশ্বে রুশ বিপ্লবের কি প্রভাব পড়েছিল?
ভূমিকা:
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব শুধু রাশিয়ার ইতিহাস নয়, সারা বিশ্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে।

মূল আলোচনা:

  • বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • পরবর্তী কালে চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে।
  • পুঁজিবাদী শক্তিগুলি সমাজতন্ত্রকে দমন করতে তৎপর হয়।
  • আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন ও কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের জোয়ার আসে।
  • উপনিবেশিক দেশগুলিতে মুক্তি আন্দোলনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
  • শ্রমিক ও কৃষকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে।
  • পশ্চিম ইউরোপে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলন শক্তিশালী হয়।
  • কমিন্টার্ন গঠনের মাধ্যমে বৈশ্বিক বিপ্লবের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে।

মূল্যায়ন:
রুশ বিপ্লব শুধু রাশিয়াকে নয়, গোটা বিশ্ব রাজনীতি ও সমাজ কাঠামোকে প্রভাবিত করেছিল।

5) লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি বলতে কী বোঝো?

ভূমিকা:
রুশ বিপ্লবের পর দেশের অর্থনীতি চরম অবনতির দিকে যায়। সেই অবস্থায় লেনিন ১৯২১ সালে নতুন অর্থনৈতিক নীতি (NEP) গ্রহণ করেন, যা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি সীমিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চালুর পথ করে দেয়।

সংজ্ঞা:
NEP বা New Economic Policy ছিল সোভিয়েত রাশিয়ায় চালু হওয়া একটি সাময়িক মিশ্র অর্থনৈতিক নীতি, যেখানে বেসরকারি মালিকানাকেও নির্দিষ্ট পরিসরে অনুমতি দেওয়া হয়।

মূল আলোচনা:

  • কৃষকদের উপর বাধ্যতামূলক খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে উত্পাদিত খাদ্য বিক্রির স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
  • ছোট শিল্প ও ব্যবসা বেসরকারিভাবে চালানোর সুযোগ দেয়া হয়।
  • রাষ্ট্র শুধুমাত্র প্রধান শিল্প (যেমন—কয়লা, রেল, ইস্পাত) নিয়ন্ত্রণ করতো।
  • মজুরি এবং দ্রব্যের দাম নির্ধারণে বাজার ব্যবস্থাকে কিছুটা স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
  • বিদেশি বিনিয়োগকেও স্বাগত জানানো হয় কিছুক্ষেত্রে।

মূল্যায়ন:
NEP-এর ফলে কৃষি ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই কিছুটা উন্নতি ঘটে। তবে এটি সমাজতন্ত্রের মূলনীতির সঙ্গে আপোষ করায় পরবর্তীতে সমালোচিতও হয়।


6) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধের বিবরণ দাও?

ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্র দুটি ছিল — পশ্চিম ও পূর্ব রণাঙ্গন। পূর্ব রণাঙ্গনে প্রধান যুদ্ধ হয় জার্মানি ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সঙ্গে রাশিয়ার।

মূল আলোচনা:

  • ১৯১৪ সালে রাশিয়া পূর্ব প্রুশিয়া আক্রমণ করলে তানেনবার্গ যুদ্ধ (Battle of Tannenberg) হয়।
  • এই যুদ্ধে জার্মান জেনারেল হিনডেনবার্গ রাশিয়াকে পরাজিত করেন।
  • পরবর্তীকালে মাসুরিয়ান হ্রদ যুদ্ধেও রাশিয়া হারে।
  • রাশিয়ার বিশাল সৈন্যবাহিনী থাকলেও সামরিক সংগঠন দুর্বল ছিল।
  • যুদ্ধকালীন দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ সৃষ্টি করে।
  • ক্রমাগত পরাজয় এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা রুশ বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে।

মূল্যায়ন:
পূর্ব রণাঙ্গনের যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক ব্যর্থতা ও অভ্যন্তরীণ বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।


7) ভার্সাই চুক্তির অর্থনৈতিক শর্তগুলি উল্লেখ কর।

ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯১৯ সালের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদে জার্মানির সঙ্গে মিত্রশক্তির একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে জার্মানির ওপর কঠোর অর্থনৈতিক শর্ত আরোপ করা হয়।

মূল আলোচনা (অর্থনৈতিক শর্ত):

  1. ৬৬০ কোটি পাউন্ড ক্ষতিপূরণ: জার্মানিকে বিপুল যুদ্ধক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়।
  2. আঞ্চলিক ক্ষতি: ধনসম্পদে সমৃদ্ধ এলসেস-লোরেন অঞ্চল ফ্রান্সকে প্রদান করতে হয়।
  3. সার কাঁচামাল হ্রাস: কয়লা ও লৌহ আকরিকের প্রধান ক্ষেত্র রাইনল্যান্ড-এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
  4. সামরিক শিল্প বন্ধ: জার্মানির অনেক শিল্প-কারখানা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়।
  5. বিদেশি বিনিয়োগ হারানো: জার্মানির উপনিবেশ ও অর্থনৈতিক আধিপত্য ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

মূল্যায়ন:
এই শর্তগুলো জার্মানির অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় এবং পরবর্তীকালে হিটলারের উত্থান ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভিত্তি তৈরি করে।


8) অর্থনৈতিক মহান্দা ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা কর।

ভূমিকা:
১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক ধস গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা ইতিহাসে “মহামন্দা” (Great Depression) নামে পরিচিত।

মূল আলোচনা:

  • ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর নিউইয়র্ক স্টক মার্কেট ধ্বসে পড়ে, যেটিকে বলা হয় “কালো বৃহস্পতিবার”।
  • বহু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, জনগণ সঞ্চয় হারায়।
  • শিল্প ও কৃষি উত্পাদন হ্রাস পায়, বেকারত্ব বাড়ে।
  • আমেরিকার প্রভাবিত হওয়া ইউরোপীয় দেশগুলিও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
  • আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
  • জার্মানি ও অস্ট্রিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • এই মন্দা ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটায়।
  • হিটলার, মুসোলিনি প্রমুখ নেতা এই দুরবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আসেন।

মূল্যায়ন:
মহামন্দা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ঘটনা ছিল না—এটি বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।

9) ভাইমার প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে কি জানো?

ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়, যাকে ভাইমার প্রজাতন্ত্র বলা হয়।

সংজ্ঞা:
ভাইমার প্রজাতন্ত্র হল ১৯১৯ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত জার্মানির গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা, যার সংবিধান গৃহীত হয় ভাইমার শহরে।

মূল আলোচনা:

  • ১৯১৯ সালে ফ্রেডারিক ইবার্ট এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন।
  • এটি একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করে, যেখানে সাধারণ ভোটাধিকার চালু হয়।
  • যুদ্ধপরবর্তী অস্থিরতা, ভার্সাই চুক্তির কঠোর শর্ত এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট এই সরকারকে দুর্বল করে তোলে।
  • হাইপার-ইনফ্লেশন, বেকারত্ব, ও রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।
  • ডানপন্থী ও বামপন্থী চরমপন্থীদের হুমকিতে সরকার বারবার টালমাটাল হয়।
  • পরবর্তীতে এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে হিটলার ১৯৩৩ সালে ক্ষমতা দখল করেন।

মূল্যায়ন:
ভাইমার প্রজাতন্ত্র গণতন্ত্রের একটি সাহসী প্রয়াস হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আর্থিক দুর্দশার কারণে তা ব্যর্থ হয়।


10) উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলীর ভূমিকা কি ছিল?

ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত ভার্সাই সন্ধি জার্মান জাতিকে গভীর অপমান ও ক্ষতির মুখে ফেলে।

মূল আলোচনা:

  • চুক্তি জার্মানিকে সম্পূর্ণ দায়ী করে এবং ক্ষতিপূরণের ভার চাপায়।
  • দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলে এই চুক্তির ক্ষতিপূরণমূলক শর্ত।
  • অনেক এলাকা যেমন এলসেস-লোরেন ফ্রান্সকে দিয়ে দেওয়া হয়, যা জাতীয় অপমান হিসেবে দেখা হয়।
  • সেনাবাহিনী সীমিত করা হয়, যা জাতীয় গর্বে আঘাত করে।
  • এইসব অপমানজনক শর্ত “ডিকটেটেড পিস” (থোপানো শান্তি) নামে পরিচিত হয়।
  • এর ফলে জার্মান জনগণের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়।
  • হিটলার এই অপমানকে ইস্যু করে নাৎসি ভাবধারার প্রসার ঘটান।

মূল্যায়ন:
ভার্সাই সন্ধির কঠোর ও একপাক্ষিক শর্তগুলি উগ্র জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণগুলির একটি হয়ে ওঠে।


11) স্পেনের গৃহযুদ্ধে পরস্পর বিরোধী শক্তি গুলির বিবরণ দাও?

ভূমিকা:
১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত স্পেনে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলে, যা পরবর্তীতে ইউরোপীয় রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে।

মূল আলোচনা (প্রধান দুটি পক্ষ):

১) গণতন্ত্রপন্থী বা রিপাবলিকান (Republicans):

  • বামপন্থী গোষ্ঠী, যাঁরা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ছিল।
  • সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট, গণতন্ত্রী, এবং শ্রমিক শ্রেণি এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
  • সোভিয়েত রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক ব্রিগেড তাদের সমর্থন করে।

২) জাতীয়তাবাদী বা ফ্যাসিস্ট (Nationalists):

  • জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো-র নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও ডানপন্থী শক্তি।
  • মোনার্কিস্ট, ক্যাথলিক গোষ্ঠী এবং জমিদার শ্রেণি এদের অন্তর্ভুক্ত।
  • হিটলারের জার্মানি ও মুসোলিনির ইতালি তাদের সমর্থন করে।

মূল্যায়ন:
এই গৃহযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র বনাম ফ্যাসিবাদের লড়াই, যার পরিণামে ফ্রাঙ্কোর দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন স্পেনে প্রতিষ্ঠিত হয়।


12) স্পেনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে তৎকালীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ কর?

ভূমিকা:
স্পেনের গৃহযুদ্ধ কেবল ইউরোপ নয়, উপনিবেশিক ভারতেও ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা স্পেনের গণতন্ত্রপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

মূল আলোচনা:

  • ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গণতন্ত্রপন্থীদের সমর্থন করে।
  • নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, পণ্ডিত নেহরু, এবং জওহরলাল নেহরু স্পেনের সংগ্রামের সঙ্গে সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
  • হরিপুরা কংগ্রেস (১৯৩৮)-এ স্পেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
  • কংগ্রেস ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংহতি চেয়েছিল।
  • ভারতের বামপন্থী যুবকরা “আন্তর্জাতিক ব্রিগেড”-এ যোগ দিয়েও লড়েছেন।

মূল্যায়ন:
স্পেনের গৃহযুদ্ধে কংগ্রেসের অবস্থান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে মানবতাবাদ ও গণতন্ত্রের আদর্শকেই তুলে ধরে।

রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী 15/16 টি বাক্যে উত্তর দাও

[প্রতিটি প্রশ্নের মান 4 ]

1) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪–১৯১৮ খ্রি.) ছিল ইতিহাসের প্রথম বৃহৎ পরিসরের আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, যা ইউরোপকে রক্তাক্ত ও রাজনৈতিকভাবে অস্থির করে তোলে।

মূল আলোচনা:

  • যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল জাতীয়তাবাদ, উপনিবেশ লোভ, সামরিক প্রতিযোগিতা ও গোপন জোট।
  • সার্বিয়ার এক জাতীয়তাবাদীর হাতে অস্ট্রো-হাঙ্গেরির যুবরাজ আর্চডিউক ফার্দিনান্দ হত্যার ফলে যুদ্ধের সূত্রপাত হয় (২৮ জুন ১৯১৪)।
  • এই হত্যাকাণ্ডের পর অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে আক্রমণ করলে ইউরোপের সব জোট ব্যবস্থাগুলি সক্রিয় হয়ে যায়।
  • একদিকে ছিল সেন্ট্রাল পাওয়ারস – জার্মানি, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি, ওসমানীয় সাম্রাজ্য।
  • অন্যদিকে ছিল মিত্র শক্তি – ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, পরে যুক্তরাষ্ট্রও।
  • মার্নের যুদ্ধ, ভার্দাঁর যুদ্ধ, সোমের যুদ্ধ, তানেনবার্গ যুদ্ধ – এসব ছিল যুদ্ধের মুখ্য লড়াই।
  • যুদ্ধ চলাকালে বিষাক্ত গ্যাস, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন প্রভৃতি আধুনিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়।
  • যুদ্ধের মধ্যেই রুশ বিপ্লব ঘটে (১৯১৭), রাশিয়া যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়।
  • ১৯১৭-এ যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়।
  • ১৯১৮ সালে জার্মান সেনা পরাস্ত হয়, ১১ নভেম্বর যুদ্ধের অবসান ঘটে।
  • যুদ্ধ শেষে ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

মূল্যায়ন:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। লক্ষ লক্ষ প্রাণহানি, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং রাজনৈতিক বিপ্লব এর প্রত্যক্ষ ফলাফল।


2) আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ১৯২৯-এর মহামন্দার প্রভাব গুলি উল্লেখ কর।

ভূমিকা:
১৯২৯ সালে আমেরিকার শেয়ারবাজার ধ্বসে পড়ে শুরু হয় বিশ্বব্যাপী এক অর্থনৈতিক সংকট—যা “মহামন্দা” নামে পরিচিত।

মূল আলোচনা:

  • বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সংকুচিত হয় এবং বহির্বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • শিল্পোৎপাদন বন্ধ হয়, ব্যাংকগুলি দেউলিয়া হয়, বেকারত্ব চরমে পৌঁছায়।
  • জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশগুলি মার্কিন ঋণের ওপর নির্ভরশীল ছিল; সেই ঋণ বন্ধ হওয়ায় তাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
  • গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা এই সংকট সামাল দিতে ব্যর্থ হয়।
  • এর ফলে চরমপন্থী ও স্বৈরশাসকদের উত্থান ঘটে — যেমন হিটলারমুসোলিনি
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতার স্থলে প্রতিটি দেশ নিজস্ব স্বার্থে চলতে থাকে — অর্থাৎ অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ শুরু হয়।
  • আমেরিকা “বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি” অবলম্বন করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে অনেকটাই সরে আসে।
  • অনেক উপনিবেশিক দেশেও এর প্রভাব পড়ে — যেমন ভারতে ব্রিটিশ শিল্পনীতি আরও কড়া হয়।

মূল্যায়ন:
এই মন্দা কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও বিশ্বকে অস্থির করে তোলে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।


3) ইটালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইটালিতে গণতন্ত্র ব্যর্থ হয় এবং তার ফলে এক চরম দক্ষিণপন্থী আদর্শ—ফ্যাসিবাদ—জন্ম নেয়।

সংজ্ঞা:
ফ্যাসিবাদ হল এক ধরনের চরম স্বৈরতান্ত্রিক মতবাদ, যেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিবর্তে রাষ্ট্র ও নেতার পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

মূল আলোচনা:

  • যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক দুর্দশা, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ।
  • ১৯১৯ সালে বেনিতো মুসোলিনি ‘ফ্যাসিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৯২২ সালে “মার্চ টু রোম” এর মাধ্যমে মুসোলিনি ক্ষমতা দখল করেন।
  • তিনি একদলীয় শাসন, সেন্সরশিপ ও গোপন পুলিশ ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করেন।
  • ইটালিকে তিনি “রোমান সাম্রাজ্যের” মতো এক সামরিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
  • ফ্যাসিবাদ জাতীয়তাবাদ, সামরিকতন্ত্র ও নেতৃত্বের পূজা-কে গুরুত্ব দেয়।

মূল্যায়ন:
ইটালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ইউরোপে গণতন্ত্রের ব্যর্থতা ও চরমপন্থার জনপ্রিয়তার ইঙ্গিত দেয়, যা পরবর্তীতে বিশ্বরাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।


4) জার্মানিতে কিভাবে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিবাদের উত্থান ঘটেছিল?

ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশা এক স্বৈরশাসক হিটলারের উত্থানকে সহজ করে তোলে।

সংজ্ঞা:
নাৎসিবাদ (Nazism) হল হিটলারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতন্ত্রী জার্মান শ্রমিক পার্টির চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী ও বর্ণবাদী মতবাদ।

মূল আলোচনা:

  • যুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তি জার্মান জনগণকে অপমানিত করে।
  • হাইপারইনফ্লেশন, বেকারত্ব এবং দুর্বল ভাইমার সরকার মানুষকে হতাশ করে তোলে।
  • ১৯২0 সালে হিটলার জাতীয় সমাজতন্ত্রী পার্টিতে যোগ দেন এবং দ্রুত নেতা হয়ে ওঠেন।
  • তার “Mein Kampf” গ্রন্থে তিনি ইহুদিবিদ্বেষ, জাতীয়তাবাদ এবং আর্য শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেন।
  • ১৯৩3 সালে হিটলার চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
  • বিরোধীদের হত্যা ও বন্দী করা হয়, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যুবকদের নাৎসি ভাবনায় গড়ে তোলা হয়।

মূল্যায়ন:
হিটলারের উত্থান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং জাতীয় অপমানের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা যায়।


5) স্পেনের গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদ বনাম বিরোধী আদর্শের সংঘাতের পরিচয় দাও?

ভূমিকা:
স্পেনের গৃহযুদ্ধ (১৯৩৬–১৯৩৯) ছিল শুধুমাত্র একটি দেশের অভ্যন্তরীণ লড়াই নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতিতে দুটি বিপরীত আদর্শের সংঘর্ষের প্রতীক।

মূল আলোচনা:

  • একদিকে ছিল রিপাবলিকান শক্তি: সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট, শ্রমিক শ্রেণি — গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে।
  • অন্যদিকে ছিল জাতীয়তাবাদী (ফ্যাসিস্ট) গোষ্ঠী: সেনাবাহিনী, জমিদার, ক্যাথলিক চার্চ, মোনার্কিস্টরা।
  • রিপাবলিকানরা সোভিয়েত রাশিয়াআন্তর্জাতিক ব্রিগেড থেকে সমর্থন পায়।
  • ফ্যাসিস্টরা হিটলারের জার্মানিমুসোলিনির ইতালি থেকে সাহায্য পায়।
  • এটি ছিল ফ্যাসিবাদ ও গণতন্ত্রের প্রথম বড় সংঘর্ষ, যা আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন তোলে।
  • স্পেনে গণতন্ত্র হারিয়ে যায়, ফ্রাঙ্কো ১৯৩৯ সালে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন।

মূল্যায়ন:
স্পেনের গৃহযুদ্ধ ছিল ভবিষ্যতের বৃহৎ সংঘর্ষ (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ)-এর পূর্বাভাস। এটি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় যে ফ্যাসিবাদ কতটা মারাত্মক হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top