আমাদের এই ওয়েবসাইটে নতুন পাঠ্যসূচী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নির্দেশিত প্রশ্নপত্রের নতুন কাঠামো অনুযায়ী প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হয়। ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন (ক্লাস ৮ সপ্তম অধ্যায় ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর) তার পাশাপাশি আমাদের এই ওয়েবসাইটে পাঠ্য বইতে উল্লেখিত এবং পর্ষদ নির্দেশিত অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়ে থাকে যা আমাদের এই ওয়েবসাইটটিকে অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে আলাদা করে। এমনকি , এবারের নতুন holistic progress card approach অনুসারে model question paper এর উত্তরগুলি দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সঠিক ও নির্ভুলভাবে। এ ছাড়া পঠনসেতু, model activity top (MAT), OPEN ENDED QUESTION (ORQ), MCQ এর অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী গুলির উত্তর আলোচনা করা হলো। প্রিয় শিক্ষার্থীগণ কে বলা হচ্ছে আমাদের এখানে নিখুঁতভাবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন এর সকল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়ে থাকে যা তোমাদের উপকারে আসতে পারে এবং তোমাদের পরীক্ষায় যাতে ভালো সফলতা আসে তার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে চলেছি। আশা করি এই ওয়েবসাইট থেকে তোমাদের উপকার করতে পারব
সর্বোপরি যাদের জন্য এই এই ওয়েবসাইটে নিখুঁতভাবে প্রশ্ন উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় তাদের সকলকেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি এবং তোমাদের উপকার হলে আমরা আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
MCQ ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন (Class 8 history chapter 7 question and answer)
বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) [প্রতিটি প্রশ্নের মান 1]
1) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কোন বছর শুরু হয়?
ক) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে
Ans : গ) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে
2) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত সচিব ছিলেন
ক) চেমসফোর্ড
খ) বেথুন
গ) লিটন
ঘ) মন্টেগু
Ans: ঘ) মন্টেগু
3) মহাত্মা গান্ধী ‘হিন্দ স্বরাজ’ নামক প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন।—
ক) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
Ans: খ) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
4) রাওলাট সত্যাগ্রহ কত খ্রিস্টাব্দে হয়?
ক) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে
Ans: গ) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
5) কার নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়?
ক) কমান্ডার মাইকেল ডায়ার
খ) লর্ড চেমসফোর্ড
গ) ভারত সচিব মন্টেগু
ঘ) স্যার সিডনি রাওলাট
Ans:ক) কমান্ডার মাইকেল ডায়ার
6) কে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করেন?
ক) মহাত্মা গান্ধী
খ) চিত্তরঞ্জন দাস
গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘ) মতিলাল নেহেরু
Ans:গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
7) অসহযোগ আন্দোলনের সময়কাল ছিল
ক) ১৯১৪ – ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ
খ) ১৯১৭-১৯২১ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯১৮-১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯২০- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
Ans:ঘ) ১৯২০- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
8) সাইমন কমিশন কবে গঠিত হয় ?
ক) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে
খ) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে
গ) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে
ঘ) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে
Ans:ক) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে
9) কংগ্রেসের কোন অধিবেশনে গান্ধীজি পূর্ণ স্বরাজের দাবি তোলেন?
ক) সুরাট অধিবেশনে ১৯০৭
খ) লাহোর অধিবেশন ১৯২৯
গ) হরিপুরা অধিবেশন ১৯৩৮
ঘ) ত্রিপুরা অধিবেশন ১৯৪৯
Ans:খ) লাহোর অধিবেশন ১৯২৯
10) কবে লবণ আইন ভঙ্গ করেন গান্ধীজি?
ক) ৬ মার্চ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৬ মার্চ 1929 খ্রিস্টাব্দে
গ) ৬ এপ্রিল 1930 খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৬ এপ্রিল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
Ans:গ) ৬ এপ্রিল 1930 খ্রিস্টাব্দে
11) আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে চলেছিল–
ক) ১৯২৮ – ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
খ) ১৯৩০ – ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
গ) ১৯৩০-১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
ঘ) ১৯৩০ -১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত
Ans:খ) ১৯৩০ – ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
12) গান্ধী আরউইন চুক্তি কত তারিখে স্বাক্ষরিত হয়?
ক) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল
খ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল
গ) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ
ঘ) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল
Ams:গ) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ
13) গান্ধীর নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন গুলির কোন সময় ক্রমটি ঠিক?
ক) চম্পারন, খেড়া ,ভারতছাড়ো ,অহিংস সহযোগ
খ)খেদা, চম্পারন, ভারত ছাড়ো, অহিংস অসহযোগ
গ) চম্পারন, খেদা,অহিংস অসহযোগ, ভারতছাড়ো
ঘ) খেড়া ,ভারতছাড়ো , অহিংস অসহযোগ, চম্পারন
Ans:গ) চম্পারন, খেদা,অহিংস অসহযোগ, ভারতছাড়ো
14) খুদাই খিদমতগার এর সিপাহীদের ‘লাল কুর্তা বাহিনী’ বলা হতো কারণ
ক) তারা লাল রঙের পতাকা ব্যবহার করতেন
খ) তারা লাল রঙের কুর্তা পড়তেন
গ) তাদের নেতা লাল পোশাক পড়তেন
ঘ) উপরের সবকটি
Ams:খ) তারা লাল রঙের কুর্তা পড়তেন
15) কার নেতৃত্বে জালালাবাদের যুদ্ধটি সংঘটিত হয?
ক) সূর্যসেন
খ) ভগৎ সিং
গ) বিনয় বসু
ঘ) যতীন দাস
Ans:ক) সূর্যসেন
16) এদের মধ্যে কেউ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বরের রাইটার বিল্ডিং অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না?
ক) বিনয় বসু
খ) রসময় সুর
গ) দীনেশ গুপ্ত
ঘ) সূর্যসেন
Ans:ঘ) সূর্যসেন
17) আসামে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন?
ক) কনকলতা বড়ুয়া
খ) মাতঙ্গিনী হাজরা
গ) কল্পনা দত্ত
ঘ) সুচেতা কৃপালিনী
Ans:ক) কনকলতা বড়ুয়া
18) কোন ভাইসরাই ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একতরফা যুদ্ধরত দেশ বলে ঘোষণা করেন?
ক) লর্ড চেমসফোর্ড
খ) লর্ড লিনলিথগো
গ) লর্ড মিন্টো
ঘ) লর্ড মেয়ো
Ans:খ) লর্ড লিনলিথগো
19) সুভাষচন্দ্র বসু কতবার কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন?
ক) ১ বার
খ ) ২ বার
গ ) ৪ বার
ঘ) ৫ বার
Ans: খ ) ২ বার
20) ফরওয়ার্ড ব্লক কত খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়?
ক) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
গ ) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে
Ans:গ ) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে
21) সুভাষচন্দ্র কবে দেশ ত্যাগ করেন?
ক) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর
খ) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর
গ) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি
ঘ) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ
Ans:গ) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি
22) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের নৌ বাহিনী প্রথম কোন জাহাজে বিদ্রোহ শুরু করে?
ক) তলোয়ার জাহাজে
খ) আকবর জাহাজে
গ) হিন্দুস্থান জাহাজে
ঘ) বাহাদুর জাহাজে
Ans:ক) তলোয়ার জাহাজে

শূন্যস্থান পূরণ কর I ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন (Class 8 history chapter 7 question and answer)
1) বিহারের চম্পারনে আন্দোলন করেছিল_______(ধুলো চাষিরা/ নীল চাষিরা /রেল শ্রমিকরা)
Ans নীল চাষিরা
2) খিলাফত কমিটি গড়ে ওঠে______(১৯১৮ /১৯১৯ / ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে)
Ans ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
3) ভগৎ সিং নিজে তৈরি করেন_____(খুদাই খিদমতগার / নওজোয়ান ভারত সভা /অনুশীলন সমিতি)
Ans: নওজোয়ান ভারত সভা
4) নাগা অঞ্চলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সামিল হন তরুণী রানী________(গিদালো /লক্ষ্মীবাঈ / ভিক্টোরিয়া)
Ans: গিদালো
5) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা কর্পোরেশনর নির্বাচনে জিতে কর্পোরেশনের মেয়র হন______(চিত্তরঞ্জন দাস / মতিলাল নেহেরু / বটুকেশ্বর দত্ত)
Ans চিত্তরঞ্জন দাস
6) ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে সভাপতি হন______(সুভাষচন্দ্র বসু /পট্টভি সীতারামাইয়া / রাসবিহারী বসু)
Ans: সুভাষচন্দ্র বসু
7) জাপানি যুদ্ধবন্দি ব্রিটিশ বাহিনীর ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করেন_______(সুভাষচন্দ্র বসু / রাস বিহারী বসু / মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন)
Ans: রাসবিহারী বসু
8) সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন_______(1939 / 1943 / 1945) খ্রিস্টাব্দে
Ans: 1943 খ্রিস্টাব্দে
9) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহ শুরু হয়_______
(বোম্বাইয়ে / দিল্লিতে / হায়দ্রাবাদে)
Ans: বোম্বাইয়ে
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলীI ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন (Class 8 history chapter 7 question and answer)
1) ব্রিটিশ সরকার গান্ধীজিকে কি উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন?
Ans কাইজার ই হিন্দ
2) গান্ধীজীর কাছে চরকা কিসের প্রতীক ছিল?
Ans অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতার
3) মন্টেগু জেমসফোর্ড সংস্কার আইন কত খ্রিস্টাব্দে পাস করা হয়?
Ans ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
4) জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড কবে সংঘটিত হয়?
Ans ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল
5) অসহযোগ আন্দোলনের দুটি ধারা কি কি?
Ans স্বদেশী ও বয়কট
6) কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন গান্ধীজি?
Ans চৌরিচৌরার ঘটনা
7) স্বরাজ্য দলের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
Ans চিত্তরঞ্জন দাস ও মতিলাল নেহেরু
8) কার নেতৃত্বে সাইমন কমিশন ভারতে আছে
Ans স্যার জন সাইমন
9) সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনের স্লোগান কি ছিল?
Ans সাইমন ফিরে যাও( Simon go back)
10) আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে কত খ্রিস্টাব্দে কোন সন্ধি দ্বারা শেষ হয়?
Ans ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ,গান্ধী আরউইন চুক্তি দ্বারা
11) আয়ন অমান্য আন্দোলনের একজন নেত্রীর নাম লেখ
Ans সরোজিনী নাইডু
12) গান্ধী আরউইন চুক্তির অপর নাম কি ছিল?
Ans দিল্লি চুক্তি
13) খান আব্দুল গফ্ফার খান এর গান্ধীবাদী সংগঠন টির নাম কি ছিল?
Ans খুদা ই খিদমতগার
14) খুদাই খিদমতগার কথাটির অর্থ কি?
Ans ঈশ্বরের সেবক
15) সীমান্ত গান্ধী নামে কে পরিচিত?
Ans খান আব্দুল গফ্ফর খান
16) ‘ মাস্টারদা ‘ নামে কোন বিপ্লবী পরিচিত ছিলেন?
Ans বিপ্লবী সূর্যসেন
17) হিন্দুস্থান রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
Ans চন্দ্রশেখর আজাদ
18) কাকোরি ষড়যন্ত্র কি?
Ans কাকোরি স্টেশনে রেল ডাকাতির অভিযোগে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের রজু করা মামলা।
19) কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় কারা অভিযুক্ত ছিলেন?
Ans ভগত সিং , রামপ্রসাদ বিশমিল , আশফাক উল্লা
20) ভগৎ সিং লাহোরের কোন পুলিশ সুপারকে হত্যা করেন এবং কেন?
Ans লালা লাজপতরা এর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পুলিশ সুপার সান্ডার্সকে হত্যা করেন
21) ভগৎ সিং এর বিখ্যাত স্লোগান কি ছিল?
Ans ইনকিলাব জিন্দাবাদ বা বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক
22) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিখ্যাত স্লোগান কি ছিল?
Ans করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে
23) কে করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে বলে আন্দোলনের ডাক দেন?
Ans মহাত্মা গান্ধী
24) ভারতছাড়ো আন্দোলন কত খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়?
Ans ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে
25) ক্রিপস মিশন কবে ভারতে আসে?
Ans ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে
26) কোন কোন কংগ্রেস অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন?
Ans হরিপুরা কংগ্রেস ও ত্রিপুরী কংগ্রেস
27) ত্রিপুরী কংগ্রেস এ সুভাষচন্দ্র সভাপতি পদে নির্বাচনে কাকে পরাজিত করেন?
Ans পট্টভি সিতারা মাইয়া কে
28) আজাদ হিন্দ ফৌজ কবে কোথায় গঠিত হয়?
Ans ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে, সিঙ্গাপুরে
29) আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সংগঠক কারা ছিলেন?
Ans ক্যাপ্টেন মোহন সিং ও রাজবিহারী বসু
30) INA এর স্লোগান কি ছিল?
Ans দিল্লি চলো
31) কবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ জাপানের দখল থেকে মুক্ত হয়?
Ans ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে
32) কোন জাহাজে প্রথম নৌ বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল?
Ans তলোয়ার জাহাজে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী I ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন (Class 8 history chapter 7 question and answer)
[প্রতিটি প্রশ্নের মান 2/4]
প্রশ্ন: ভারতের উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর:
ভারতের উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে, যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রকে নাড়িয়ে দেয়। যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন সম্পদ ও জনশক্তিকে কাজে লাগায়।
- ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়।
- জনগণের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়, যার ফলে জীবনযাত্রা ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।
- খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়।
- যুদ্ধের পরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আরও জোরদার হয় এবং স্বাধীনতার দাবি প্রবল হয়।
প্রশ্ন: গান্ধীজীর স্বরাজ ভাবনা কেমন ছিল?
উত্তর:
গান্ধীজীর স্বরাজ ভাবনার মূল ভিত্তি ছিল আত্মনির্ভরতা, নৈতিকতা ও গ্রামীণ জীবনমুখীনতা। তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভারতের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সমাজব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন চেয়েছিলেন।
- তিনি পাশ্চাত্য আধুনিকতার ভোগবাদ ও যন্ত্রনির্ভরতার বিরোধিতা করেন।
- স্বরাজের জন্য গান্ধীজি বুনিয়াদি গ্রাম অর্থাৎ স্বনির্ভর গ্রাম গড়ে তোলার কথা বলেন।
- তাঁর মতে, প্রকৃত স্বরাজ মানে প্রতিটি গ্রাম হবে একটি স্বাধীন একক, যেখানে মানুষ স্বশাসিত ও আত্মনির্ভরশীল হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী রাজনৈতিক জীবনে কি প্রভাব ফেলেছিল?
Ans মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়
ভারতবর্ষে নেতৃত্ব দেওয়ার আগে মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন।
সম্পূর্ণ অহিংস উপায়ে পরিচালিত মহাত্মা গান্ধীর এই আন্দোলন সত্যাগ্রহ নামে খ্যাতি লাভ করে।
তিনি ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সত্যাগ্রহ মতাদর্শকে কাজে লাগান।
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনের সুবাদে গান্ধীজীর একটি সর্বভারতীয় ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল।
গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আদর্শের মূলভাব নাকি ছিল
মূল ভাবনা
সাধারণ অর্থে সত্যের প্রতি আগ্রহকে সত্যাগ্রহ বলে। গান্ধীজীর মতে যা সত্য এবং ন্যায় সঙ্গত সেই বিশ্বাসে অনর থেকে শান্ত ও নিরস্ত্রভাবে সংযম ও অহিংসার সঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রতিপক্ষের হৃদয় জয় করা হলো সত্যাগ্রহ।
প্রশ্ন: গান্ধীজী সম্বন্ধে ভারতের সাধারণ মানুষের ধারণা কেমন ছিল?
উত্তর (পয়েন্ট আকারে):
- সাধারণ মানুষ তাঁকে “মহাত্মা” ও “বাপু” নামে শ্রদ্ধা করত।
- তিনি ছিলেন সত্য ও অহিংসার প্রতীক, তাই মানুষ তাঁকে একজন ধর্মীয় ও নৈতিক নেতা হিসেবে দেখত।
- গ্রামীণ জীবন ও সাধারণ পোশাকে জীবনযাপন করায় সাধারণ মানুষের সাথে সহজেই একাত্ম হতে পেরেছিলেন।
- ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব সাধারণ মানুষকে সাহস ও দিকনির্দেশনা দিয়েছিল।
- অনেকেই বিশ্বাস করত, গান্ধীজি ঈশ্বরপ্রদত্ত এক মহান ব্যক্তি যিনি ভারতকে স্বাধীনতা এনে দেবেন।
প্রশ্ন: ‘রাওলাট আইন’ বলতে কি বুঝ?
সংজ্ঞা:
রাওলাট আইন ছিল ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাশ করা একটি দমনমূলক আইন, যার মাধ্যমে সরকার কোনোরকম বিচার ছাড়াই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও আটক করার অধিকার পায়।
ব্যাখ্যা:
- এই আইন অনুযায়ী বিচারে সাক্ষী বা প্রমাণ ছাড়াও কাউকে বন্দি রাখা যেত।
- সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা হয়।
- ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতারা একে “কালো আইন” বলে অভিহিত করেন।
- এই আইনের প্রতিবাদেই গান্ধীজি দেশজুড়ে অসহযোগ ও প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন।
প্রশ্ন: ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের গুরুত্ব লেখো (২টি পয়েন্টে)।
উত্তর:
- ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন প্রণয়ন করে, যা ভারতীয়দের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং গণআন্দোলনের সূচনা করে।
- একই বছরে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা ব্রিটিশ শাসনের বর্বর চিত্র তুলে ধরে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে এক নতুন মোড় আনে।
এই দুই ঘটনার ফলে ভারতীয় রাজনীতি আরও আন্দোলনমুখী ও জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড বলতে কি বুঝ?
উত্তর:
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ছিল ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসরে সংঘটিত এক নিষ্ঠুর গণহত্যা, যেখানে ব্রিটিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়।
- সেই দিন হাজার হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণ সভার জন্য জড়ো হয়েছিলেন।
- কোনো সতর্কতা ছাড়াই ব্রিটিশ সেনা প্রায় ১০ মিনিট ধরে নির্বিচারে গুলি চালায়।
- শতাধিক মানুষ নিহত ও সহস্রাধিক আহত হন।
- এই বর্বর হত্যাকাণ্ড সারা ভারত জুড়ে তীব্র প্রতিবাদের জন্ম দেয় এবং স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।
প্রশ্ন: অসহযোগ আন্দোলন কেন প্রত্যাহার করা হয় / গান্ধীজী কেন অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন?
উত্তর:
- ১৯২২ সালে চৌরি চৌরা ঘটনা-তে উত্তেজিত জনতা পুলিশের থানায় আগুন লাগিয়ে ২২ জন পুলিশকে হত্যা করে, যা গান্ধীজীর অহিংসার নীতির পরিপন্থী ছিল।
- আন্দোলন ক্রমেই সহিংসতার দিকে মোড় নিচ্ছিল, যা গান্ধীজী মেনে নিতে পারেননি; তাই তিনি আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন।
এই দুই কারণে গান্ধীজি আন্দোলন স্থগিত করে দেশবাসীকে নৈতিক শুদ্ধতার বার্তা দেন।
প্রশ্ন: চৌরি চৌরা ঘটনা কি?
উত্তর:
চৌরি চৌরা ঘটনা ছিল ১৯২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরি চৌরা নামক স্থানে সংঘটিত এক সহিংস ঘটনা, যা অসহযোগ আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
- সে দিন একদল আন্দোলনকারী পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিল।
- পুলিশের লাঠিচার্জে উত্তেজিত জনতা থানায় আগুন লাগিয়ে ২২ জন পুলিশকে হত্যা করে।
- এই ঘটনার ফলে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন, কারণ এটি তাঁর অহিংস নীতির পরিপন্থী ছিল।
- চৌরি চৌরা ঘটনা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে বিবেচিত হয়।
প্রশ্ন: স্বরাজ্য দল কেন গঠন করা হয়? দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর:
- ১৯২২ সালে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের পর বহু কংগ্রেস নেতা বিশ্বাস করেন যে ব্রিটিশ শাসনের ভিতর থেকেই আন্দোলন চালানো উচিত, তাই তাঁরা আইনসভায় যাওয়ার পক্ষে মত দেন।
- গান্ধীজীর অহিংসা ও আন্দোলন থেকে বিরতির নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে নেতারা সংসদীয় রাজনীতির মাধ্যমে স্বরাজ আদায় করার লক্ষ্য নিয়ে স্বরাজ্য দল গঠন করেন।
এই দুই উদ্দেশ্যেই ১৯২৩ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ ও মোতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: কেন ভারতীয়রা সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করেছিলেন? দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর:
- সাইমন কমিশনে একজনও ভারতীয় সদস্য ছিল না, ফলে ভারতীয়রা মনে করেন যে এটি ছিল ভারতীয় স্বার্থের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা।
- কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের পর্যালোচনা, অথচ ভারতীয়দের মতামত বা অংশগ্রহণ ছাড়াই তা করা হচ্ছিল, যা অপমানজনক বলে মনে হয়।
এই কারণে ভারতজুড়ে “সাইমন গো ব্যাক” স্লোগান তুলে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।
প্রশ্ন: আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর:
১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে ভারতের শ্রমিক শ্রেণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদে অংশ নেয়।
- বহু শ্রমিক ধর্মঘট ও কর্মবিরতি সংগঠিত করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
- তাঁরা ব্রিটিশ মালিকানাধীন কারখানা ও রেলওয়েতে কাজ বন্ধ করে আন্দোলনকে সমর্থন জানান।
- শ্রমিকরা মিছিল, সভা ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বিপুল জনসমর্থন গড়ে তোলেন।
- তাঁদের আন্দোলনের ফলে জাতীয়তাবাদী চেতনা শ্রমজীবী মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
এইভাবে শ্রমিক শ্রেণী আইন অমান্য আন্দোলনে শক্তিশালী সামাজিক ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
প্রশ্ন: টীকা লিখ – ডান্ডি অভিযান
উত্তর:
ডান্ডি অভিযান ছিল মহাত্মা গান্ধী নেতৃত্বাধীন একটি ঐতিহাসিক অহিংস আন্দোলন, যা ১৯৩০ সালের ১২ই মার্চ শুরু হয়। এটি ছিল ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন ভঙ্গ করে জনগণকে স্বরাজের পথে উদ্বুদ্ধ করার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ।
- গান্ধীজি ৭৮ জন অনুসারীকে নিয়ে সাবরমতী আশ্রম থেকে ডান্ডি পর্যন্ত ২৪০ মাইল পদযাত্রা করেন।
- ৬ এপ্রিল ডান্ডি সমুদ্রতটে পৌঁছে তিনি নিজ হাতে লবণ তৈরি করে লবণ আইন ভঙ্গ করেন।
- এই অভিযান ভারতজুড়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের জোয়ার তুলেছিল।
- ডান্ডি অভিযান আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা ঘটায় এবং সাধারণ মানুষকে বৃহৎ আকারে জাগিয়ে তোলে।
এই আন্দোলন ছিল অহিংস প্রতিরোধের একটি স্মরণীয় দৃষ্টান্ত, যা আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হয়।
প্রশ্ন: ডান্ডি অভিযানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর:
ডান্ডি অভিযান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি শুধু একটি লবণ আইন ভঙ্গের ঘটনা নয়, বরং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
- এটি আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করে ও জনগণকে সরাসরি অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।
- সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গ্রামবাসী ও মহিলারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
- গান্ধীজীর অহিংস পন্থার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাড়ে এবং বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।
- ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয় জাতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে।
এইভাবে ডান্ডি অভিযান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনগণের ঐক্য ও রাজনৈতিক চেতনার জাগরণ ঘটায়।
প্রশ্ন: খুদাই খিদমতগার কাদের বলা হত?
উত্তর:
খুদাই খিদমতগার বলা হত সেই স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠীকে, যারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অহিংস পথে পাথান জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা ছড়িয়ে দেয়।
- এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন খান আব্দুল গফফার খান, যিনি ‘সীমান্ত গান্ধী’ নামে পরিচিত।
- তাঁদের লক্ষ্য ছিল অহিংসা, শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করা।
- এই গোষ্ঠীর সদস্যরা লাল রঙের পোশাক পরতেন, তাই তাঁদের “লাল কুর্তাওয়ালা” বলেও ডাকা হত।
- তাঁরা গান্ধীজীর নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাতেন।
খুদাই খিদমতগার ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ব্যতিক্রমী ও শক্তিশালী দৃষ্টান্ত।
প্রশ্ন: নেহেরু রিপোর্ট কী? দুটি প্রস্তাব এবং দুটি প্রতিক্রিয়া লিখ।
উত্তর:
নেহেরু রিপোর্ট ছিল ১৯২৮ সালে মোতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে প্রস্তুতকৃত একটি সংবিধান খসড়া, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের জন্য স্বশাসনের রূপরেখা নির্ধারণ করা।
দুটি প্রস্তাব:
- ভারত হবে সম্পূর্ণ স্বরাজভিত্তিক একটি গঠনমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
- সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকবে না, সকল সম্প্রদায়ের জন্য সম্মিলিত নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
দুটি প্রতিক্রিয়া:
- হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অভাব দেখা দেয়, কারণ মুসলিম লীগ এই রিপোর্টে তাদের স্বার্থরক্ষিত হয়নি বলে প্রতিবাদ করে।
- ব্রিটিশ সরকার রিপোর্টটি গ্রহণ করেনি, কারণ এটি উপনিবেশিক স্বার্থের পরিপন্থী ছিল এবং ব্রিটিশ আধিপত্য বজায় রাখার পক্ষে ছিল না।
এইভাবে, নেহেরু রিপোর্ট ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দেয়।
প্রশ্ন: কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর:
১৯২৯ সালের লাহোর অধিবেশন ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক যুগান্তকারী অধ্যায়। এই অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলে।
গুরুত্ব:
- পূর্ণ স্বরাজ (Complete Independence) ছিল এই অধিবেশনের প্রধান ঘোষণাপত্র, যা ২৬ জানুয়ারিকে “স্বাধীনতা দিবস” হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
- ব্রিটিশ আইন ও শাসনের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে নাগরিকদের আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
- এই অধিবেশন থেকেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারিত হয়, যা পরবর্তী আন্দোলনগুলির ভিত্তি গড়ে দেয়।
লাহোর অধিবেশন জাতীয়তাবাদী চেতনাকে এক ঐতিহাসিক মোড়ে পৌঁছে দেয়।
প্রশ্ন: কবে ও কাদের মধ্যে গান্ধী-আরউইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর:
১৯৩১ সালের ৫ই মার্চ, মহাত্মা গান্ধী ও ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড আরউইনের মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
- এটি ছিল আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত করার বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকারের কিছু শর্ত মেনে নেওয়ার চুক্তি।
- এই চুক্তি অনুযায়ী গান্ধীজি লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিতে সম্মত হন এবং ব্রিটিশ সরকার বন্দী আন্দোলনকারীদের মুক্তি দিতে রাজি হয়।
এই চুক্তি ব্রিটিশদের সঙ্গে কংগ্রেসের প্রথম আনুষ্ঠানিক বোঝাপড়ার প্রয়াস ছিল।
প্রশ্ন: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ লেখো
১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পেছনে দুটি প্রধান কারণ ছিল:
- ব্রিটিশদের প্রতি ভারতীয়দের আস্থার অভাব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার ভারতের মতামত না নিয়েই দেশকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে, যা জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
- স্বাধীনতার দাবির তীব্রতা বৃদ্ধি: বহু আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পরও ব্রিটিশরা ভারতকে স্বাধীনতা দিতে রাজি হচ্ছিল না, ফলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের মাধ্যমে “করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে” শ্লোগানে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়।
এই আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক চূড়ান্ত গণপ্রতিরোধ।
রচনাধর্মী উত্তর I ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন (Class 8 history chapter 7 question and answer)
প্রশ্ন: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে নৌ বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা কর।
ভূমিকা:
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে — সেটি হল নৌসেনা বিদ্রোহ, যা “রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি মিউটিনি” নামেও পরিচিত। এটি ছিল ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ভারতীয় সেনাদের দ্বারা সংঘটিত এক ঐতিহাসিক বিদ্রোহ, যা ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিকে প্রবলভাবে কাঁপিয়ে তোলে।
বিদ্রোহের সূচনা:
১৯৪৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি, বোম্বের ‘এইচএমআইএস তালওয়ার’ যুদ্ধজাহাজের নাবিকরা নিম্নমানের খাদ্য, বর্ণবৈষম্যমূলক ব্যবহার ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিবাদে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। শীঘ্রই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে মুম্বই, করাচি, কোচিন সহ ৭৮টি জাহাজ ও স্থলঘাঁটিতে — যেখানে প্রায় ২০,০০০ নাবিক অংশগ্রহণ করেন।
নৌ বিদ্রোহের কারণ (কমপক্ষে ৪টি):
- খাদ্য ও বাসস্থানের নিম্নমান: নাবিকদের খাবার ও থাকার পরিবেশ ছিল অত্যন্ত খারাপ এবং অবহেলার শিকার।
- বর্ণবৈষম্য ও অসম আচরণ: ইংরেজ অফিসাররা ভারতীয় নাবিকদের সাথে অবমাননাকর ও বৈষম্যমূলক আচরণ করত।
- রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি: আজাদ হিন্দ ফৌজ ও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের প্রভাব নাবিকদের জাতীয়তাবাদী চিন্তায় উদ্দীপ্ত করে।
- বিচার ও শাস্তির ভয়: স্বাধীনতার দাবিদার আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দীদের বিচারের ঘটনায় নাবিকদের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
দাবি-দাওয়া:
বিদ্রোহী নাবিকদের মূল দাবিগুলি ছিল —
- খাদ্যের মান উন্নয়ন
- ব্রিটিশ অফিসারদের হঠানো
- স্বাধীনতার ঘোষণা
- আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দীদের মুক্তি
নৌ বিদ্রোহের গুরুত্ব:
- এটি প্রমাণ করে, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মধ্যেও ব্রিটিশবিরোধী চেতনার প্রসার ঘটেছে।
- ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, আর বেশিদিন ভারতে শাসন চালানো সম্ভব নয়।
- এটি স্বাধীনতা প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, এবং ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পথে এক গভীর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে।
- হিন্দু-মুসলিম নাবিকেরা একত্রে আন্দোলনে অংশ নিয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দী বিচারের প্রভাব:
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচারভারকালে দেশের মানুষ ব্যাপক প্রতিবাদে অংশ নেয়। এই বিচার সামরিক বাহিনীর ভারতীয় সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়, যা নৌ বিদ্রোহকে অনুপ্রাণিত করে।
এটি প্রমাণ করে, স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র বাহিনী পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হতে প্রস্তুত।
উপসংহার:
১৯৪৬ সালের নৌ বিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক জ্বলন্ত অধ্যায়। যদিও এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, কিন্তু এই বিদ্রোহ ব্রিটিশদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় – ভারত আর তাদের শাসন মানবে না। এ এক প্রমাণ যে, স্বাধীনতা তখন আর কেবল রাজনৈতিক নেতাদের দাবি ছিল না, বরং সৈনিক ও সাধারণ মানুষের হৃদয়ের আর্তি হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্ন: ভারত ছাড়ো আন্দোলন গান্ধীবাদী পথে হয়নি — যুক্তি-সহ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকা:
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক চূড়ান্ত জনবিদ্রোহ। মহাত্মা গান্ধী এই আন্দোলনের ডাক দিলেও, বাস্তব চিত্রে দেখা যায়—এই আন্দোলনের পথ, চরিত্র এবং গতি অনেকক্ষেত্রেই গান্ধীবাদী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। ফলে এই মন্তব্যটি যথার্থ যে, “ভারত ছাড়ো আন্দোলন গান্ধীবাদী পথে হয়নি।”
গান্ধীবাদী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
- অহিংসা ও সত্যাগ্রহ ছিল গান্ধীজীর মূল অস্ত্র
- নেতৃত্ব ছিল নিয়ন্ত্রিত ও সংগঠিত
- আন্দোলন ছিল শৃঙ্খলিত ও পরিকল্পিত
- গান্ধীজীর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে নৈতিক ও আত্মিক চাপ সৃষ্টি করা হতো শাসকের উপর
কেন ভারত ছাড়ো আন্দোলন গান্ধীবাদী পথে হয়নি? (যুক্তিসহ ব্যাখ্যা):
- নেতৃত্বহীন আন্দোলন: আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পর গান্ধীজি, নেহরু, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ নেতারা গ্রেফতার হয়ে যান, ফলে আন্দোলন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে।
- স্বতঃস্ফূর্ত ও সহিংস রূপ: জনগণ নিজ উদ্যোগে আন্দোলন শুরু করে। বহু জায়গায় রেললাইন উপড়ে ফেলা, টেলিগ্রাফ কাটা, সরকারি দপ্তরে আগুন লাগানো ইত্যাদি সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটে।
- ছাত্র, যুবক ও শ্রমিক শ্রেণীর উগ্র অংশগ্রহণ: যুবসমাজ ও শ্রমিকরা গান্ধীর নির্দেশ ছাড়াই সশস্ত্র প্রতিবাদে লিপ্ত হয়, যা গান্ধীবাদের অহিংস দর্শনের পরিপন্থী।
- উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও বাংলায় ব্যাপক সহিংসতা: এই প্রদেশগুলিতে পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালানো, ব্রিটিশ অফিসারদের উপর আক্রমণ ইত্যাদি ঘটনার খবর পাওয়া যায়।
বিশ্লেষণ:
যদিও গান্ধীজি এই আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন, তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে তা অহিংস ও নিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালিত হয়নি। গণআন্দোলন হয়ে পড়ে অপ্রতিরোধ্য ও স্বতঃস্ফূর্ত। গান্ধীজী নিজেও পরবর্তীতে এই সহিংসতার দায় স্বীকার করেননি।
উপসংহার:
সুতরাং বলা যায়, ভারত ছাড়ো আন্দোলন গান্ধীর দর্শনের প্রভাবে শুরু হলেও তার বাস্তব প্রয়োগ গান্ধীবাদ থেকে সরে গিয়েছিল। আন্দোলন ছিল জনতার — কিন্তু তা গান্ধীবাদী আদর্শের নিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালিত হয়নি। এই কারণেই মন্তব্যটি যুক্তিপূর্ণ ও ঐতিহাসিকভাবে সঠিক।
প্রশ্ন: আইন অমান্য আন্দোলনের জনগণের অংশগ্রহণের চরিত্র কেমন ছিল? সূর্যসেন ও ভগৎ সিং-এর সংগ্রাম কি গান্ধীজীর মতামতের সহগামী ছিল?
ভূমিকা:
১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গৌরবময় অধ্যায়, যেখানে সাধারণ মানুষ সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তবে এই সময়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু বিপ্লবী যুবক ভিন্ন পথে ব্রিটিশ শাসনের মোকাবিলা করছিলেন। সূর্যসেন ও ভগৎ সিং-এর মত বিপ্লবীদের সংগ্রাম গান্ধীজীর অহিংস দর্শনের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণের চরিত্র:
- গ্রাম ও শহর উভয় স্তরে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়; কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, নারী—সবাই এতে যুক্ত হন।
- অহিংস পথে বিদেশি পণ্য বর্জন, লবণ আইন ভঙ্গ, ব্রিটিশ অফিস বর্জন প্রভৃতি কর্মসূচি পালিত হয়।
- নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এই আন্দোলনের বড় বৈশিষ্ট্য, যা আগে এত স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি।
- আঞ্চলিক ও ধর্মীয় বিভাজন ভুলে অনেকেই আন্দোলনে একত্রে সামিল হন।
এই আন্দোলন প্রথমবারের মতো জনগণকে স্বশাসনের বাস্তব রূপে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
সূর্যসেন ও ভগৎ সিং-এর সংগ্রাম কি গান্ধীজীর সহগামী ছিল?
না, তাঁদের সংগ্রাম গান্ধীজীর মতাদর্শের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। কারণ:
সূর্যসেন:
- চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুঠ করে বিপ্লবী কার্যকলাপ চালান।
- তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশদের পতন ঘটানো।
- গান্ধীজীর অহিংসার আদর্শ থেকে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ভগৎ সিং:
- ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সাহসী ও সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
- তিনি ও তাঁর সংগঠন হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন মনে করতেন, সহিংসতা কখনও কখনও ন্যায়সঙ্গত হতে পারে।
- গান্ধীজি ভগৎ সিং-এর মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করলেও, তাঁর বিপ্লবী পথ সমর্থন করেননি।
উপসংহার:
আইন অমান্য আন্দোলন ছিল জনগণের ঐক্যবদ্ধ অহিংস প্রতিবাদের এক বিশাল দৃষ্টান্ত, যা গান্ধীজীর আদর্শে পরিচালিত হয়। তবে সেই সময়ে সূর্যসেন ও ভগৎ সিং-এর মত বিপ্লবীরা এক ভিন্ন পথে কিন্তু একই লক্ষ্যে—স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছিলেন। তাই বলা যায়, তাঁদের সংগ্রাম উদ্দেশ্যে সহগামী হলেও, পন্থায় ছিল ভিন্নতা।
প্রশ্ন: ভগৎ সিং স্মরণীয় কেন?
ভগৎ সিং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক সাহসী, চিন্তাশীল এবং আদর্শনিষ্ঠ বিপ্লবীর নাম। তিনি শুধু ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেননি, বরং নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন—যেখানে থাকবে না শোষণ, বৈষম্য ও পরাধীনতা।
‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ শুধু একটি স্লোগান ছিল না, ছিল তাঁর প্রাণের ধ্বনি, যা আজও যুবসমাজকে জাগ্রত করে। ভগৎ সিং বিশ্বাস করতেন, মানুষের চিন্তার পরিবর্তন ছাড়া প্রকৃত স্বাধীনতা সম্ভব নয়।
তিনি শিক্ষিত, যুক্তিবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। লালা লাজপত রায়ের হত্যার প্রতিবাদে তিনি স্যান্ডারসকে হত্যা করেন এবং নিজের দায়িত্ব স্বীকার করে নেন।
তিনি কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন কেবল প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে, কোনও প্রাণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। ফাঁসির আগে কারাগারে বসেই তিনি লেখেন অসংখ্য প্রবন্ধ—যা আজও বিপ্লব ও ন্যায়ের পাঠ পড়ায়।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাঁর আত্মবলিদান তাঁকে মৃত্যুর পরেও অমর বিপ্লবী করে তুলেছে। তাই ভগৎ সিং স্মরণীয় শুধুই সাহসের জন্য নয়, চিন্তা ও চেতনার দীপ্তিতে আজও তিনি অগ্রদূত।
প্রশ্ন: সাইমন কমিশন কেন গঠিত হয়েছিল এবং ভারতীয়রা কেন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল?
ভূমিকা:
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সাইমন কমিশনের আগমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মুহূর্ত। এটি একদিকে যেমন ব্রিটিশ সরকারের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, অন্যদিকে এটি ভারতীয়দের মনে প্রবল ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দেয়। এই প্রতিবাদই পরবর্তী সময়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পথকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
সাইমন কমিশন কেন গঠিত হয়েছিল?
ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার (Government of India Act, 1919) কার্যকর করার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ১০ বছরের মধ্যে আবার একটি কমিশনের মাধ্যমে ভারতীয় শাসনব্যবস্থার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।
এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি ব্যাল্ডউইন ‘Indian Statutory Commission’ গঠন করেন, যা ইতিহাসে সাইমন কমিশন নামে পরিচিত।
কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতে আইন ও শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন খতিয়ে দেখা এবং ভবিষ্যতের জন্য ব্রিটিশ সরকারের করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করা।
এই কমিশনের সভাপতিত্ব করেন স্যার জন সাইমন, এবং সদস্য ছিলেন সাতজন—যাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন ইংরেজ। একটিও ভারতীয় নাম না থাকায় ভারতের রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র অপমান ও অসন্তোষের সঞ্চার হয়।
ভারতীয়রা কেন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল?
সাইমন কমিশনের প্রধান বিরোধিতার কারণ ছিল—
- এতে কোনো ভারতীয় সদস্য ছিলেন না, ফলে ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্তে তাঁদের মতামত প্রকাশের কোনও সুযোগ ছিল না।
- এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন, যেখানে ভারতীয়দের মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
- ভারতীয়দের মনে প্রশ্ন জাগে: “ভারতের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে পর্যালোচনার অধিকার কেবল ইংরেজদের কেন থাকবে?”
ফলে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, হিন্দু মহাসভা, শ্রমিক দল সহ সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দল এই কমিশনের বিরোধিতা করে।
১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন সাইমন কমিশন ভারতে আসে, তখন সর্বত্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। ভারতজুড়ে শোনা যায়—“Simon Go Back!” স্লোগান।
লাহোরে পুলিশের লাঠিচার্জে লালা লাজপত রায় গুরুতর আহত হন এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন, যা জনগণের ক্ষোভকে চরমে পৌঁছে দেয়। ভগৎ সিং এবং তাঁর সহচররা এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ব্রিটিশ অফিসার স্যান্ডারসকে হত্যা করেন।
উপসংহার:
সাইমন কমিশনের আগমন ও তার বিরোধিতা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এটি শুধু ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল না, বরং ভারতীয় গণতান্ত্রিক চেতনার জাগরণ।
এই আন্দোলনের ফলেই পরবর্তী সময়ে নেহরু রিপোর্ট তৈরি হয় এবং পূর্ণ স্বরাজের দাবি আরও শক্তিশালী হয়। সাইমন কমিশনের বিরোধিতা এক ঐতিহাসিক শিক্ষা দেয়—“কোনো জাতির ভাগ্য নির্ধারণ তার নিজের হাতে হওয়াই শ্রেয়।”
প্রশ্ন: ভারতের অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও প্রভাব আলোচনা কর।
ভূমিকা:
১৯১৪ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত চলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুধু ইউরোপের ভূখণ্ডেই নয়, উপনিবেশগুলোর উপরেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ভারত, তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে, সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে না জড়ালেও ব্রিটিশদের সহায়ক শক্তি হিসেবে যুদ্ধের বোঝা বহন করে। এর ফলে ভারতের অর্থনীতি ভয়াবহভাবে প্রভাবিত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণ:
- যুদ্ধকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পোশাক, অস্ত্র, চিকিৎসা সামগ্রী ইত্যাদি ভারত থেকে সরবরাহ করা হয়।
- ভারতের কৃষিপণ্য, যেমন—গম, চাল, তুলা, চিনি—ইউরোপে রপ্তানি বাড়ে, কিন্তু তার বদলে ভারতীয় বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
- যুদ্ধ খরচ মেটাতে ভারতের জনগণের উপর বাড়তি কর আরোপ করা হয়।
- উৎপাদন ও শিল্পক্ষেত্র ব্রিটিশ সামরিক চাহিদা পূরণে কেন্দ্রীভূত হয়, যার ফলে সাধারণ মানুষের চাহিদা উপেক্ষিত হয়।
ভারতের অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব:
১. দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি:
যুদ্ধের সময় খাদ্য, কাপড় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে।
২. চাল, গম, চিনি ইত্যাদির ঘাটতি:
ব্রিটিশ সরকার ইউরোপীয় যুদ্ধক্ষেত্রে খাদ্য রপ্তানিতে জোর দেওয়ায়, ভারতের বাজারে জিনিসের অপ্রতুলতা তৈরি হয়।
৩. চাহিদার তুলনায় মজুরি কমে যায়:
যুদ্ধকালীন শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও মজুরি তেমন বাড়ে না। ফলে শ্রমজীবী মানুষ আর্থিক সংকটে পড়ে।
৪. কর বৃদ্ধি ও ঋণ:
ভারতবাসীর উপর আয়কর ও এক্সসাইজ ডিউটি চাপানো হয়। ব্রিটিশ সরকার ভারতের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণও নেয়।
৫. ধনী-গরিব বৈষম্য বৃদ্ধি:
কয়েকজন ব্যবসায়ী যুদ্ধকালীন সুযোগে প্রচুর মুনাফা করে ধনী হন, আর সাধারণ মানুষ আরও গরিব হয়ে পড়েন।
৬. শ্রমিক আন্দোলন ও অসন্তোষ:
বেতন না বাড়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়ায় এবং পরবর্তী সময়ে বড় আকারে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়।
উপসংহার:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ভারতের অর্থনীতিকে এক সংকটময় অবস্থায় ফেলে দেয়। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে করের বোঝা ও অভাব-অনটন—সব মিলিয়ে ভারতের সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। এই অর্থনৈতিক শোষণ ও অবিচারই ভারতীয়দের মনে স্বাধীনতার দাবি আরও দৃঢ় করে তোলে।
এই সময় থেকেই জনগণের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী চেতনা ও জাতীয়তাবাদ তীব্র হতে থাকে।
Read more…