“WBSSC বিতর্কের নতুন অধ্যায়: বাতিল ২৬০০০ চাকরি ফিরল পুরনো কর্মস্থলে ফেরার আশা”

ভূমিকা

(বাতিল ২৬০০০ চাকরি ফিরল পুরনো কর্মস্থলে ফেরার আশা) ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেন, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (WBSSC) ২০১৬‑এর নিয়োগ প্যানেলের প্রায় ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল করা হয়। এই রায়কে কেন্দ্র করে এক আন্তঃবহুমাস ব্যাপক আন্দোলন, তার পরবর্তী প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও জনজীবনে এর প্রভাব নিয়ে উঠে এসেছে তীব্র প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া।

১। রায়ের পটভূমি

২০১৬‑এর এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল—অমলিন OMR জালিয়াতি, ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ, অনিয়ম ভিত্তিক নিয়োগের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট ২২ এপ্রিল ২০২৪‑তে প্যানেল বাতিল করে। পরে এটি সুপ্রিম কোর্টে যায়। দীর্ঘ শুনানির পর দিনক্ষণ নির্ধারণের ঝামেলার পর অবশেষে ৩ এপ্রিল ২০২৫‑তে উচ্চ আদালত সেই রায় বহাল রাখে ।

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ উল্লেখ করেন যে “পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া জালিয়াতিতে কলঙ্কিত”, এজন্য বাতিল ছাড়া উপায় নেই। প্রায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জন কর্মীর চাকরি বাতিল করা হয় ।

বিশেষ ব্যতিক্রম হিসেবে ক্যান্সারগ্রস্ত প্রার্থী সোমা দাসসহ কয়েকজন চাকরিতে ধরে রাখা হয়।

বাতিল ২৬০০০ চাকরি ফিরল পুরনো কর্মস্থলে ফেরার আশা

২। চাকরিচ্যুতদের সংখ্যা ও প্রভাব

হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট ২৫,৭৫৩ জন (স্বাভাবিকভাবে প্রায় ২৬,০০০) নিয়োগ বাতিল করে । এর মধ্যে ছিল:

  • নবম–দশম শ্রেণির: ১২,৯৪৬ জন
  • একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির: ৫,৭৫৬ জন
  • গ্রুপ C কর্মী: ২,৪৮৩ জন
  • গ্রুপ D কর্মী: ৪,৫৫০ জন।

এর ফলে রাজ্যের বহু স্কুলে কর্মী সংকট দেখা দেয়। সাংবাদমাধ্যমে জানান, হুগলি জেলার এক স্কুলে শুধু ১৫ জনের মধ্যে ৪০% ছাঁটাই, বিষয়টি স্কুল পরিচালনায় প্রভাব ফেলেছে ।

বেতন নিয়ে জটিলতা, মার্চ–এপ্রিল মাসের বেতন কাকে দেয়া হবে তা নিয়েও দ্বিধা তৈরি হয়; কারণ বেতন সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল ।

৩। ফেরত‑চাকরি (Old Job Reinstatement)

(বাতিল ২৬০০০ চাকরি ফিরল পুরনো কর্মস্থলে ফেরার আশা) সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়, যারা পুরনো সরকারি চাকরি ছিল কিন্তু ২০১৬–তে এসএসসি যোগ দিয়ে সেটি ছেড়ে দিয়েছিলেন, তারা আগের চাকরিতে ফিরে যেতে পারবেন। তবে তাদের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে তিন মাসের মধ্যে।

এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত বাতিল হওয়া সকলকেই বেতন দেবে রাজ্য সরকার।

৪। তালিকা প্রকাশ ও প্রক্রিয়ার আপডেট

WBSSC একাধিক ধাপে সেই ‘ফিরে পাওয়া আবেদনকারীদের’ তালিকা প্রকাশ করেছে। ওয়েবসাইটে প্রথমে ১,২৮২ জনের নাম, পরে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৪৩৭ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল—মোট ১,৭১৯ জন আবেদনকারীর তালিকা প্রকাশিত হয়।

তালিকায় বিস্তারিত উল্লেখ ছিল:(বাতিল ২৬০০০ চাকরি ফিরল পুরনো কর্মস্থলে ফেরার আশা)

  • ক্রমিক ও ডকেট নম্বর
  • প্রার্থীর নাম
  • পদ (যেমন নবম–দশম, একাদশ–দ্বাদশ, গ্রুপ C/D)
  • বর্তমান ও পুরনো কর্মস্থল, জেলা, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি।

এই তালিকা মূলত প্রার্থীদের স্বচ্ছতা ও আবেদন যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সহজ করতে পরিবেশন করা হয়েছে।

৫। আবেদন ও যাচাই: Challenges & Government Steps

আগামী তালিকায় আরও আবেদন জমা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষাদফতর সূত্রে জানা যায়, জুনের প্রথম দিকে প্রায় ৪০০ জন আবেদন জমা দিয়েছেন Anandabazar Patrika। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছে যাচাইকরণ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে—জেনে নিতে হবে প্রার্থী আগে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন, কি শর্তে ছুটি নিয়েছিলেন, তাদের কাঙ্খিত পদে যোগদান হয়েছিল কি না ইত্যাদি ।(বাতিল ২৬০০০ চাকরি ফিরল পুরনো কর্মস্থলে ফেরার আশা)

বিভিন্ন জেলার ডিআইদের তিন দিনের মধ্যে চার্ট রিজাল্ট দিতে বলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ‘যোগ্য’ নন বা ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের পৃথক করতে হবে। শিক্ষকেরা জানান, যদিও তারা তাদের পুরনো কর্মে ফিরতে চান, ভোগান্তির পাশাপাশি পদোন্নতির, বেতন ও posting‑এর বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বাতিল ২৬,০০০ চাকরি, ফিরল পুরনো কর্মস্থলে ফেরার আশা

৬। আইনি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

চাকরিচ্যুতদের মধ্যে কিছু প্রবল প্রতিক্রিয়া জমেছে—WBSSC দপ্তরের সামনে ধর্না, পুলিশ-শিক্ষকের মধ্যে সংঘর্ষ পর্যন্ত ধরা পড়েছে । এক প্রতিবাদকারী শিক্ষকের বক্তব্য: “আমরা আছি এখানেই যতক্ষণ না দাবি মেনে নেওয়া হয়” ।

রাজনৈতিক পর্যায়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষা দফতর নেতারা সক্রিয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। বিরোধী দল এ দুর্নীতির মূল প্রশ্ন তুলছে, ও কর্মীদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ দাবি করছে।

৭। শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব

চাকরি বাতিলের পরিস্থিতির কারণে, প্রায় ৩,১২৫ টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৫,৪২৬ টি নবম–দশম শ্রেণির বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রুপ C ও D কর্মীদের অনুপস্থিতি প্রায় ৩ হাজার স্কুলে সমস্যার সৃষ্টি করেছে ।

এই সংকট সরকারি ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে দীর্ঘমেয়াদে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে শিক্ষা বিশ্লেষকদের মধ্যে।

৮। ভবিষ্যৎ পথ ও সুপারিশ

১. নিয়মিত রেজিস্ট্রেশন: WBSSC ও জেলা দফতরের দ্রুত ও স্বচ্ছ যাচাইকরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
২. আবেদনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ: ডিজিটাল ফর্ম, স্পষ্ট নির্দেশনা ও সময়সীমা সংক্রান্ত সচেতনতা জরুরি।
৩. সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ: আদালত, WBSSC, শিক্ষাদফতর ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ বাধ্যতামূলক।
৪. Teachers’ Welfare: চাকরিচ্যুতদের আর্থিক ও মানসিক সহায়তা প্রয়োজন।
৫. System Reform: দীর্ঘমেয়াদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা—OMR পদ্ধতির শক্তিশালী নিরাপত্তা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও মনিটরিং বৃদ্ধি।

উপসংহার

WBSSC‑এর ২৬,০০০+ শিক্ষক-অশিক্ষকের নিয়োগ বাতিল এবং পুরনো চাকরিতে ফেরার তালিকা প্রকাশ—এটি শুধু আইনগত এক প্রক্রিয়া নয়; এটি শতশত পরিবারের ভবিষ্যৎ, রাজ্য শিক্ষাব্যবস্থার গুণমান এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রতিফলন। তালিকা প্রকাশ হয়ত কিছু পরিবারে স্বস্তি আনছে; তবে আরও দরকার দ্রুত, ন্যায্য ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। চাই কার্যকর প্রশাসনিক পদক্ষেপ, শিক্ষকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ‑সম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ।

WBSSC–এর “২৬,০০০ চাকরি বাতিল ও পুরনো পদে ফেরার আবেদনকারীদের তালিকা” ডাউনলোড করতে পারবেন:

➡️ WBSSC: List of 26,000 Teachers‑Staff Whose Jobs Were Cancelled and Can Return to Old Job – PDF

এই পিডিএফে প্রথম পর্যায়ে ১,২৮২ জন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৪৩৭ জনের তালিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—মোট ১,৭১৯ জন আবেদনকারীর তথ্য রয়েছে। আপনার প্রয়োজনে এটি সহায়ক হবে, আশা করি!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top